ঢাকা: দেশের পোশাক শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন অভিযোগ মালিক, শ্রমিক ও সরকার পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই করা হচ্ছিলো। সম্প্রতি পাইওনিয়ার গার্মেন্টসে ঘটে যাওয়া বিশৃংখলাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার পর বিজিএমইএ’র পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এসব ষড়যন্ত্রের নানাবিধ প্রমাণ।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা যায়, জুন মাসে ভালুকায় পাইওনিয়ার গার্মেন্টসের কয়েক মাইল দূরে শ্রমিকদের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়। এ ঘটনায় গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ কোনোভাবে জড়িত ছিলো না। তারপরও বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়, বানিজ্যমন্ত্রণালয় কাউকে অবহিত না করে এ ঘটনা প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে চিঠি দেয় শ্রমিক নেতা আমিরুল ইসলাম আমিরের সংগঠন।
এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল ওয়াশিংটনে গেলে এসব বিষয়ে নানা জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিধি দলকে। এভাবেই গার্মেন্টস শিল্পকে দেশের বাইরে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছেন ওই ১০/১২ জন শ্রমিক নেতা। ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে এসব তথ্য পাচার হচ্ছে বলে বিজিএমইএ’র দাবি।
সূত্রটি আরও জানায়, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নাজমা আক্তার, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিরসহ ১০/১২ জন নেতার বিরুদ্ধে তথ্য পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে খোদ সংগঠনগুলোর শ্রমিকদের কাছ থেকেই।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। শ্রমিক সংগঠন চলবে নিজেদের টাকায়, তা না হয়ে যদি তা বিদেশি অর্থপুষ্ট হয় তাহলে এমনই ঘটবে। কারণ বিদেশিরা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই টাকা দেয়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা মালিক ও সরকার পক্ষ থেকে অনেক আগেই বলা হয়েছে। যারা বিদেশিদের টাকা নেয় তাদের এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
বিদেশ থেকে অর্থপুষ্ট হয়ে তথ্য পাচারের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে অস্বীকার করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সংগঠনকে বিভিন্ন দেশ সহায়তা করে এটি সত্য। কিন্তু তা নির্দিষ্ট প্রকল্পের ভিত্তিতে। এর মানে এটা নয় যে, আমরা এদেশের পোশাক শিল্পের স্পর্শকাতর তথ্য বিদেশিদের দেবো। যারা এ ধরনের অভিযোগ করেন তাদের সামর্থ্য নেই বিদেশের সাহায্য পাওয়ার তাই এসব কথা বলেন। আর এ ধরনের অপপ্রচার মূলত বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে চালানো হয়।
এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিএমইএ’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব শ্রমিক নেতা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তারা শুধু তথ্য পাচার করেই ক্ষান্ত থাকে না। তারা বিভিন্ন সময় নির্দিষ্ট দেশের অ্যাম্বেসিগুলো থেকে চাপ প্রয়োগ করে ক্রেতাদের বাধ্য করে অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করতে।
তথ্য পাচারের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম। তিনি বলেন, এদেশে ঘটনা ঘটেছে কিন্তু আমরা কেউ জানি না। আমরা জানতে পারি কোনো অ্যাম্বেসি বা বিদেশের কাছ থেকে, এটা কিভাবে হয়? তথ্য পাচার হচ্ছে। বিদেশি অর্থপুষ্ট শ্রমিক নেতারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের পাচারকৃত তথ্যের কারণে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সরকারের উচিত শ্রমিক নেতাদের জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪