ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করফাঁকিতে উদ্বেগ, আসছে ‘কোটিপতি খোঁজ’ অভিযান

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
করফাঁকিতে উদ্বেগ, আসছে ‘কোটিপতি খোঁজ’ অভিযান

ঢাকা: দ্রুত বাড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশব্যাপী কোটিপতির সংখ্যা।

জাতির জন্য এ খবর একদিকে সুখকর অন্যদিকে উদ্বেগেরও বটে!

কোটিপতি বাড়ছে কিন্তু তাদের অধিকাংশই কর আওতার বাইরে! এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে ‘কোটিপতি খোঁজ’ অভিযান চালাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দ্রুতই এ সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির একটি সূত্র। একই সঙ্গে যেসব কোটিপতি রিটার্ন দাখিল করেন না বা অনিয়মিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর অঞ্চলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
আয়কর বিবরণী দাখিল স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে হওয়ায় অধিকাংশ করদাতা আয়ের তথ্য গোপন করেন। বিশেষ করে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরা এমনটি বেশি করে থাকেন। প্রতিবছর কোটিপতির সংখ্যা বাড়লেও তারা রিটার্নে তা উল্লেখ করেন না। এজন্য এনবিআরে কোটিপতির সংখ্যা তেমন একটা বাড়ে না। এতে সৃষ্টি হয় চরম করফাঁকি।
 
রাজস্ব বোর্ড বলছে, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সময়সীমা দু’দফা বৃদ্ধি করে ৩০ নভেম্বরে তা শেষ হয়। এ সময় সারাদেশে আয়কর বিবরণীতে এক কোটি টাকার ওপর সম্পদ দেখিয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন।

যদিও এনবিআরের নিজস্ব হিসেবে এ সংখ্যা তিন লাখের ওপরে।

কোটিপতির বিরাট অংশ রিটার্ন দাখিল না করায় উদ্বেগ জানিয়েছে এনবিআর। যারা রিটার্নে তথ্য গোপন করেছেন তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ এসেছে। কোটিপতিদের সঙ্গে চলতি অর্থবছরে যেসব সক্ষম করদাতা রিটার্ন দাখিল করেননি অথবা কর আওতার বাইরে তাদেরও খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ জন (সেপ্টেম্বর ২০১৫)। যেখানে ২০১১ সালে ৭৮ হাজার ১৫০, ২০১২ সালে ৯০ হাজার ৬৫৫, ২০১৩ সালে ৯৮ হাজার ৫৯১টি ও ২০১৪ সালে ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯৭৪টি।

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এনবিআর কর্মকর্তাদের মতে, ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী কোটিপতির সংখ্যা প্রায় সোয়া লাখ হলেও এ সংখ্যা হবে তিন লাখের বেশি।
 
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, কোটিপতিদের করফাঁকি বা কোটিপতিদের করের আওতায় আনতে না পারা উদ্বেগের বিষয়।
 
তিনি বলেন, বর্তমানে তথ্য প্রবাহের যুগ। কোটিপতিদের ব্যাংক হিসেব থেকে শুরু করে সব তথ্যই নেওয়া সম্ভব। কেউ ইচ্ছে করলেও তথ্য গোপন করতে পারবে না।
 
রিটার্নে দেওয়া তথ্য ভুল দিলে কঠোর শাস্তি, জরিমানার ব্যবস্থা করলে কোটিপতি কর দেওয়ার সংখ্যা কমবে না, বাড়বে বলে জানান তিনি।
 
এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন প্রথম সচিব বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি আয়কর রিটার্ন তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে তথ্যের গরমিল পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, কোটি টাকা থাকার পরও কারা রিটার্নে তা দেখাননি তাদের একটি তালিকা করা হচ্ছে। জরিপ অনুযায়ী আমাদের কাছেও একটি তালিকা রয়েছে। গোয়েন্দা দল কাজ করছে। একই সঙ্গে বর্তমানেও একটি জরিপ চলছে। কোটিপতি থেকে শুরু করে সক্ষম কোনো করদাতার রেহাই নেই।

ফাঁকির বিষয়ে এনবিআর জিরো টলারেন্স দেখাবে বলে জানান তিনি।
 
‘কর দিলে ফুলেল বরণ, কর না দিলে বাঘের ছোবল’ বর্তমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এই নীতি গ্রহণ করেছে। এমনটাই জানিয়েছেন চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
 
তিনি বলেন, করফাঁকি যারা দিয়ে চলেছেন তাদের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। সার্বিক জরিপও চলছে। কাজেই কোটিপতি থেকে শুরু করে কোন করদাতা রেহাই পাবে না।

তিনি আরও বলেন, রিটার্ন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সারাদেশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযান শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তথ্য গোপন করে পার পাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময় : ০৮২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
আরইউ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।