ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সবজির দাম বাড়ছে

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
সবজির দাম বাড়ছে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দিনাজপুর: শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় দিনাজপুরে আলু, মরিচ, শিমসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজি গাছে পচন দেখা দিয়েছে। বড় হচ্ছে না ফুলকপি ও বাধা কপির আকার।

তাই সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে দিনাজপুরে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬ নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের আলু চাষি মোকছেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে থাকেন তিনি। গত মৌসুমে আলু চাষ করে লাভবান হলেও চলতি মৌসুমে লেটব্রাইট রোগে আলু গাছ আক্রান্ত হয়ে পচতে শুরু করেছে। গাছ বাঁচাতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করছেন এখন।

তিনি জানান, এবার তার পাঁচ বিঘা জমিতে ফ্রেন্সিলা নামে নতুন জাতের আলুর বীজ রোপণ করেছেন। এর মধ্যে এক বিঘা বীজ তৈরির পরিকল্পনা করলেও আলু গাছের পরিস্থিতি দেখে সে আশা তার পূরণ হচ্ছে না। তবে, আলু উৎপাদনে যে খরচ হচ্ছে তা পুষিয়ে একটু বেশি দামেই বিক্রি করবেন তিনি।

উপজেলার চেরাডাঙ্গী স্কুল সংলগ্ন পাইকপাড়া গ্রামের শিম চাষি শফিকুল ইসলাম প্রায় ১০ বিঘা জমিতে শিমের চাষ করছেন।

বাংলানিউজকে তিনি জানান, ঘন কুয়াশার পানি শিম গাছের গোড়ায় জমে লালচে ও বাদামি রঙ ধারণ করে পচন দেখা দিয়েছে। এছাড়া জাব পোকা আক্রমণ করেছে। এসব রোগ থেকে প্রতিকার পেতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে শিম গাছের পরিচর্যা করতে হচ্ছে।

বিরল উপজেলার জগৎপুর গ্রামের মরিচ চাষি মনসুর আলী বাংলানিউজকে জানান, দুই বিঘা জমিতে মরিচের চারা রোপণ করেছেন। অতিরিক্ত ঘন কুয়াশার কারণে শীতল পানি গাছের গোড়ায় জমে মরিচ গাছে পচন ধরেছে। মরিচ গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে জেলায় এবার মরিচের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে, দিনাজপুর সদর উপজেলার ৪ নং শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের মমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শীত ও ঘন কুয়াশা স্থায়ী না হওয়ায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারে বড় হচ্ছে না। তাই এ অবস্থাতেই কপি বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। ঘন কুয়াশা ও শীত যত হবে, ততই এসব সবজির জন্য ভালো।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারের পাইকার ও আড়ৎদাররা জানান, জেলায় শীতের সবজির দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দিনাজপুর বাহাদুর বাজার কাঁচামাল (সবজি) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় কৃষকরা আমাদের কাছে বেশি দামে সবজি বিক্রি করছে। তাই আমরাও সামান্য হাতে রেখে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে বাহাদুর বাজার পাইকার আড়ৎগুলোতে ফুলকপির প্রতি কেজি ৬ থেকে ৭ টাকা বিক্রি হয়েছে। যা বর্তমানে ৮ থেকে ৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপির দাম ছিল ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি। যা ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শিম ছিলো ১০ থেকে ১২ টাকা, বর্তমানে ১৩ থেকে ১৪ টাকা, কাঁচা মরিচ ছিলো ২০ টাকা, বর্তমানে ২৫ টাকা, বেগুন গত সপ্তাহে ১১ থেকে ১২ টাকা থাকলেও বর্তমানে ১৪ টাকা।

আলুর দাম এক সপ্তাহ আগে থেকে দুই/এক টাকা বৃদ্ধি পেলেও আগামীতে আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

মো. ইকবাল আরও জানান, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিতে গেলে উৎপাদন খরচ হিসাবেই দিতে হবে। তাই আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম আরও বাড়বে।

দিনাজপুর বাহাদুর বাজার এনএ মার্কেটের খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. মাচ্ছু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিদিন সবজি কিনে বিক্রি করি। যেদিন যে ধরনের মূল্য পাই, তার থেকে সামান্য কিছু লাভে বিক্রি করি।   কাঁচামাল চড়া দামে বিক্রির আশায় রাখলে পচে যাবে। তাই বিক্রি করে ফেলতে হয়।

কৃষক-সবজি পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবমিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে দিনাজপুরে শীতের সবজির বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
পিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।