ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমে খুশি বেশিতে বেজার

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
কমে খুশি বেশিতে বেজার ছবি: রানা- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কোনো জিনিস লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেলে কার না ভাল লাগে। বেশি পেলে খুশি হবে, এটা হয়তো সবারই জানা, কিন্তু এখানে ঘটছে উল্টোটা।

বলছি রাজধানীর কাপ্তান বাজারের মুরগী ব্যবসায়ীদের কথা। এখানে মুরগীর গাড়ি কম এলে ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটে, আর বেশি এলেই মন ভারি বা বেজার করে বসে থাকেন।
 
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দিনগত রাত দুইটায় গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের গা ঘেঁষে থাকা কাপ্তান বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুরগী বেচাকেনার ধুম পড়েছে। গাড়ি ভর্তি মুরগী আসছে, মুহূর্তের মধ্যে তা আবার চলে যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়।
 
কাপ্তান বাজারের কয়েকজন মুরগী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার কথা। মো. মামুন (৩৫) বলেন, ‘রাত ১০টা থেকে এখানে মুরগী বেচা-কেনা শুরু হয়, চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত। ’
 
তিনি বলেন, গাড়ি কম এলেই আমাদের ফূর্তি বেড়ে যায়, কেননা সেদিন একটু ভাল দামে বিক্রি করতে পারি। তবে গাড়ি বেশি এলে কোন কোন দিন লোকসান দিয়ে হলেও মুরগী বিক্রি করে চলে যাই। কাপ্তান বাজারে দাম উঠানামা করলেও ফার্ম মালিকদের কাছ খুব বেশী একটা হেরফের হয় না। তাই যেদিন মুরগী কম আসে, তখন দাম বাড়িয়ে দেই, তাতে আমাদের লাভ বেশি হয়।
 
রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকে মূলত মুরগীগুলো আনা হয়। এরমধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ, ভৈরব, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলা। এসব জেলা থেকে প্রতিদিন পিকআপ ভ্যান ভর্তি ব্রয়লার মুরগী আসছে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে। এরপর চলে যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
 
কাপ্তান বাজারে যেন দিন হয় রাতে। মধ্য রাতে গিয়ে বুঝার উপায় নেই, এটি রাতের বাজার নাকি দিনের কোন এক সময়। কেননা মুরগীর কেনাবেচার এতোটাই ধুম যে, কারো সাথে দুই মিনিট কথা বলার সুযোগ নাই। এখানে কেউ মুরগী গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন, কেউবা ঝুড়ি ভর্তি করছেন। আবার কেউ আছেন ওজোন মাপার পর তা খাতায় লিপিবদ্ধ করছেন। এভাবেই রাতভর বেচা কেনা চলে।
 
ফার্ম মালিকের কাছ থেকে ১১৮ টাকায় কিনে বিক্রি করছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি, কখনোবা ১৪৫ টাকা কেজি।
 
মো. ইকবাল হোসেন নামে এক মুরগী ব্যবসায়ী মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছেন লেয়ার মুরগী কিনতে। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যেই আমি এখানে মুরগী কিনতে আসি। ঢাকার হাট হল ফটকামারির হাট। এখানে গাড়ি একটা বেশি ঢুকলে দাম পড়ে যায়, আবার দুই গাড়ি কম  এলে দাম বেড়ে যায়। তাই এখানে দাম নিয়ে বসে থাকলে চলে না।
 
কাপ্তান বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগী কিনে কুনিপাড়ায় নিতে খাঁচা ভর্তি করে দাঁড়িয়ে আছেন লোকমান হোসেন। তিনি জানান, কাপ্তান বাজারে দাম কখন যে বাড়ে, আর কখন যে কমে বুঝা মুশকিল। কোন দিন সকালের দিকে কম দামে পাওয়া যায়, আবার কোন দিন সকালে মুরগীই পাওয়া যায় না। তাই দুই টাকা বেশি বা কম হলেও আমি রাতেই কিনে ফেলি।  
 
তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার রাতের বাজারটা একটু বেশি জমে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। কেননা শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মুরগীর চাহিদা বেড়ে যায়।
 
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, কাপ্তান বাজারে প্রতি রাতে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ গাড়ি মুরগী কেনা-বেচা হয়। প্রতি গাড়িতে ১ হাজার থেকে দুই হাজার কেজি মুরগী থাকে।
 
কামাল হোসেন নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের ব্যবসা আর থাকে ন‍া। পথে মুরগী ভার্তি পিকআপ দেখলেই পুলিশ বেরিকেড দেয়, চাঁদা না দিলে আসতে দেয় ন‍া। ঘাটে ঘাটে পুলিশের চাঁদা দিলে ব্যবসা করব কিভাবে?
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
এসএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।