ঢাকা: বিদ্যুৎ ও ওয়াসাসহ নগরীর সমস্ত ইউটিলিটি সেবার লাইনগুলো ম্যাপিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেন খুব সহজেই সেবা লাইনগুলো শনাক্ত করা যায় এবং নষ্ট হয়ে গেলে দ্রুত সময়ে সমাধান করা যায়।
মঙ্গলবার (২৪ মে) নগরীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন।
সভায় ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ঢাকা নগরীর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও সরবরাহ লাইনের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও নির্ভরযোগ্যতা আনতে ‘ডেসকো’র এলাকায় ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন, ক্ষমতা বর্ধন এবং রুপান্তর’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৩৩ কেভি ওভারহেড ক্যাবলকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলে রুপান্তরের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ড সার্কিটের বিদ্যুতের লোড ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। বিতরণ ব্যবস্থায় ইনটারাপশন ও ফ্রিকোয়েন্সি কমানো হবে।
প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
এর মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ডে যাচ্ছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) বৈদ্যুতিক কাযর্ক্রম। এর আওতায় ডেসকো এলাকায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা সিস্টেম এভারেজ ইন্টারাপশন ইনডেক্স (এসএআইডিআই) এবং সিস্টেম এভারেজ ইনটারাপশন ফ্রিকোয়েন্সি ইনডেক্স (এসএআইএফআই) কমানো হবে।
এতে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক(এআইআইবি) দেবে ৩৫৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ডেসকো। প্রথম ধাপে নগরীর মিরপুর, উত্তরা, টঙ্গী, দক্ষিণখান ও গাজীপুরে বাস্তবায়িত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পুরো নগরীর ম্যাপিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি একবার বেইজিং শহরে গিয়েছিলাম। সেখানে একটি ভবন পরিদর্শন করেছিলাম। সেই ভবনে দেখেছি, বেইজিং শহরের কোটি মানুষ কিভাবে বিদ্যুৎ ও পানি সুবিধা পান। সমস্ত মানুষের সেবার তথ্য এক ভবনে। কোথাও কোনো বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে মুহূর্তের মধ্যেই সমাধান করা হয়। এ পদ্ধতি আমাদের দেশেও চালুর লক্ষ্যে ম্যাপিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভৌত সুবিধাদি ও গবেষণা কার্যক্র বৃদ্ধিকরণের’ জন্য ২০৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা।
এ প্রকল্পের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বুলগেরিয়া সফরে গিয়েছিলাম। বুলগেরিয়ার সরকার অবাক হয়ে যায়, কিভাবে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশে ১৬ কোটি মানুষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছেন। বুলগেরিয়া এ বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে চায়’।
কুমিল্লা বার্ড ও বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (আরডিএ) বিদেশিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
৩৫০ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয় সভায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বড় পরিবারের সদস্যরা যদি অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন, তবে সে একদিন এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে’।
সভায় ৩ হাজার ১৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকায় পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটিরও অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বস্তিবাসীসহ সব নগরবাসীর জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও ঢাকা শহরের রাস্তা না কেটেই উচ্চ ঘনত্বের পলিথিন পাইপ ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরের ৮২টি এলাকায় পর্যায়ক্রমে মিটারিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
‘বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এদিকে ঢাকায় নতুন অতিরিক্ত ৭০ হাজার গ্রাহক সংযোগের সুযোগ সৃষ্টি ও বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য অবকাঠামো প্রস্তুত করা হবে। সে লক্ষ্যে ‘ডেসকো’র উত্তরা ও বসুন্ধরা ১৩২/৩৩/১১ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বর্ধন ও পুনর্বাসন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় একনেক সভায়। প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এ প্রকল্পের আওতায় নগরীতে কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে তাৎক্ষনিকভাবে বসুন্ধরা ও উত্তরা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর
** ঢাকা পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন একনেকে