ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম

‘আমপ্রহরী’

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
‘আমপ্রহরী’ ছবি: বাংলানিউজটোেয়েন্টিফোর.কম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফিরে: চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। দু’দিন পর পূর্ণিমা।

কিন্তু বাগানের ঘন আমগাছের পাতা ভেদ করে মাটিতে পৌঁছে না চন্দ্র কিরণ। বাগানের ঘন অন্ধকারে ভেদ করে দূরে মাঝে মাঝে জোনাকি পোকার মতো ক্ষীণ আলো চোখে পড়ছে। জোনাকি পোকার আলো লক্ষ্য করে সামনে গিয়ে দেখা হলো হারিকেন হাতে চল্লিশোর্ধ ফিরোজ কবিরের সঙ্গে।

তিনি আমপ্রহরী, রাতের আমবাগান পাহারা দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার টিকরামপুর গ্রামের আমবাগানের আমপ্রহরী এই ফিরোজ কবির।
বাঁশ-চাটাই দিয়ে একটু বড় আকারে গড়া টং ঘর। ফিরোজ জানালেন, এটি তাদের হেড অফিস। আম পাড়ার পর সকল আম এখানে এনে জমা করা হয়।

২৪ একর (৭২ বিঘা) জায়গায় টিকরামপুরের এই আমবাগানটি মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গাউসউজ্জামানের পৈত্রিক সম্পত্তি। বর্তমানে বাগানটি বছর মেয়াদী লিজ নিয়ে আমচাষ করছেন আব্দুল বারী।

রাতেও বাগানের পরিচর্যায় ছিলেন আব্দুল বারী। আরেকটি টংঘরে পাহারারত ছিলেন টিটু।

আমপ্রহরী ফিরোজ কবির জানান, চোর-ডাকাতের ভয় নেই। রাতেও কোনো গাছে ‘ঠেকা’ লাগে কি-না, অন্য কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় কি-না, তাই তারা বাগানেই থাকেন। মূলত ২৪ ঘণ্টাই তারা বাগানে কাজ করেন। দিনে-রাতে বাগানে ঘুরে ঘুরে পাহারা দেন।

বাগানটির লীজ গ্রহণকারী আবদুল বারী জানান, ২৪ একর আয়তনের এ বাগানে আমপ্রহরী মাত্র ১৫ জন। এ অঞ্চলের মানুষ বাগানের আম চুরি করার কথা মনেও আনেন না। না হলে মাত্র ১৫ জনে এতো বড় বাগান পাহারা দিয়ে কুলানো যেতো না।

শুধু সদর উপজেলাই নয়, জেলার শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল, গোমস্তাপুর উপজেলার সর্বত্রও আম মৌসুমে একই দৃশ্য চোখে পড়বে। কানসাট এলাকার আমচাষি জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস জানান, শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও সুনামের সঙ্গে আমপ্রহরী হিসাবে কাজ করে থাকেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ১ হাজার ৭০২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ২৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হচ্ছে। বিশাল বিশাল এসব বাগানে ‘আমপ্রহরী’ হিসাবে কাজ করছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। জেলার সব আমবাগানেই  দেখা মিলবে তাদের। বছরের বাকি সময় তারা অন্য কাজ করেন। এভাবেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।