ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খাদ্যে উদ্বৃত্ত ভোলায় রোয়ানু’র আঘাতে কৃষিতে ক্ষতি

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬
খাদ্যে উদ্বৃত্ত ভোলায় রোয়ানু’র আঘাতে কৃষিতে ক্ষতি

ভোলা থেকে: দুপুর গড়িয়ে বেলা পশ্চিমের দিকে হেলে পড়লেও মরিচের খেতে যাননি জসিম। অথচ গত বছরের এ সময়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মরিচের খেতেই তার সময় কেটেছে।

এ বছরও তাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র ছোবলে তার মরিচের খেত তছনছ হয়ে গেছে।
 
তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের দেওয়ানপুর এলাকার মরিচ চাষি জসিম জানালেন, এবার তার জমিতে বেশ ভালো আবাদ হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টির পানিতে প্রায় এক বিঘা জমির সব মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ফসলের আয় দিয়েই সারা বছরের খোরাক মিটে তার।
 
গত শুক্র ও শনিবার দেশের উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাব বাংলানিউজে সরেজমিনে তুলে ধরতে গিয়ে ওঠে আসে জসিম উদ্দিনের ফসলের জমি নষ্ট হওয়ার চিত্র। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেলো শত শত কৃষকের ফসলের খেত নষ্ট হয়েছে।
 
জেলার কৃষি অফিসও জানালো একই তথ্য। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, খাদ্যে উদ্বৃত্তের এ জেলায় এবার খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হতে পারে। বিশেষ করে আউশ ধান ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ওপর বেশি প্রভাব পড়বে।
কৃষকরা জানান, রোয়ানু’র সবচেয়ে বড় প্রভাব তজুমদ্দিন উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। তাই এ অঞ্চলের ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। অনেক কৃষক আছেন যারা কৃষি আবাদের ওপর নির্ভর করে সংসারের খরচ নির্বাহ করেন। তারা এবার বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়বেন।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু কিছু মরিচের খেতে এখনো পানি আটকে রয়েছে। আউশের বীজতলা পানির মধ্যে নিমজ্জিত। গ্রীষ্মকালীন সবজি বিশেষ করে পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল জমিতে পড়ে আছে।
 
শেষ মুহূর্তে গ্রীষ্মকালীন সবজি ঢেঁড়শ, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া তুলতে গিয়ে ঝড় আর বৃষ্টির কবলে পড়ে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অনেক জায়গায় পানের বরজ ভেঙ্গে পড়েছে। চিনাবাদাম, তিল, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলেও বেশ ক্ষতির শিকার হয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা।
চাঁদপুর ইউনিয়নের ৬০ বছর বয়সী কৃষক ওজিমুদ্দিন জানান, আউশ ধানের বীজতলার অনেক ক্ষতি হয়েছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেওয়ানপাড়ায় অধিকাংশ জমিই তলিয়ে গেছে। এ সময়ে কী করণীয় তার সঠিক দিক-নির্দেশনা চান তিনি।
 
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গতবছর খাদ্য উৎপাদন হয়েছে সাত লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৫৬ হাজার টন।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, শেষ মুর্হূতে গ্রীষ্মকালীন সবজি তুলতে গিয়ে কৃষকরা রোয়ানুর কবলে পড়েছেন। কিছু বীজতলা তলিয়ে গেছে। সেগুলো এখন জাগতে শুরু করেছে। এছাড়া বীজের সমস্যা হলে কৃষি অফিস থেকে তা সরবরাহ করা হবে। এ বৃষ্টির কারণে আউশের আবাদও ভালো হবে বলে জানান তিনি।
 
রোয়ানুর প্রভাবে মোট ১১ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ টাকার কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬
একে/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।