ঢাকা: রাজধানীকে যানজটমুক্ত এবং আধুনিক নগরীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে অবশেষে কাজ শুরু হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের। তবে সার্ভে ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পে তেমন কোনো দৃশ্যমান ভৌত অগ্রগতি নেই।
সম্প্রতি সরকারের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ এবং মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সহকারী পরিচালক জয়নাল মোল্লা মেট্রোরেল প্রকল্প পরিদর্শন করে এমন তথ্য দিয়েছেন।
জয়নাল মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইএমইডি’র পক্ষে প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেট্রোল-লুব্রিকেন্ট, পরামর্শক সেবা খাতে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। রাজস্ব খাত থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এসব খাতে ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মূলধন অঙ্গের অগ্রগতি বাবদ আরও ৭৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ’।
‘মূলধন অঙ্গের আওতায় যানবাহন কেনা, অফিস ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি অঙ্গে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। গাড়ির জ্বালানি ও মূলধন খাতে খরচ হওয়া ৭৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্যে মূলধন খাতের ব্যয় ৪৯১ কোটি টাকা। বাকি টাকার জ্বালানি কিনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের ব্যবহার করা গাড়িতে ব্যবহার করেছেন’।
তিনি আরও বলেন, ‘সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি, প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো ভৌত অগ্রগতি হয়নি। তবে মাসখানেক পর ভৌত কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মেশিনারি ও ইক্যুইপমেন্ট মোবিলাইজ করা হবে’।
প্রকল্পের আওতায় উত্তরা ডিপোর জন্য ডিপিপি’তে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ২২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরা ডিপোর জন্য এ জমি রাজউক থেকে কেনা হয়েছে, যার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। এ ডিপোর ভূমি উন্নয়নের জন্য চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্প সাইটে যন্ত্রপাতি নেওয়া হবে।
ঢাকার যানজট দূর করা এবং দক্ষ ও কার্যকরী দ্রুতগামী পরিবহন চালুর লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকে ‘ঢাকা মাস ৠাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট (ডিএমআরটিডি) বা মেট্রোরেল প্রকল্প’ অনুমোদন পায়। এর আগে ওই বছরের জুলাই মাসে পেপার ওয়ার্কিংসহ নানা কাজ শুরু হয়।
সর্বসাধারণের জন্য গণপরিবহনের সুবিধাদির আধুনিকায়নের জন্য মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
উত্তরা তৃতীয় ফেইজ-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত যাবে মেট্রোরেল।
মেট্রোরেলের মোট ১৬টি স্টেশন থাকবে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিলে।
রুটের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার, রোলিং স্টক ২৪ সেট। প্রতি সেটে ৬টি করে কার থাকবে। ঘণ্টায় গতি ১০০ কিলোমিটার এবং ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।
অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি দেশের মেগা প্রকল্প। প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরুর আগে কিছু খরচ করতে হয়েছে। পরামর্শক সেবা, বেতন-ভাতা ও সার্ভেসহ নানা কাজে কিছু খরচ হয়েছে’।
প্রকল্পের ভৌত কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও মাসখানেক লাগবে। সে সময় প্রকল্পের ডিপো এলাকায় ভৌত কাজ শুরু হবে। রুট লেভেলে দৃশ্যমান কাজ দেখতে এখনও বছরখানেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে ২০১৯ সালের মধ্যেই ঢাকাবাসীকে মেট্রোরেলে চড়াতে পারবো’।
তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং ২০২১ সালের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত রুটে মেট্রোরেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সর্বসাধারণের জন্য গণপরিবহনের সুবিধাদির আধুনিকায়ন হবে। নগর পরিবহন ব্যবস্থা অধিকতর নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর