ঢাকা: পবিত্র রমজান উপলক্ষে সারা দেশের মতো ঢাকা নগরীতে খোলা ট্রাকে করে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেঁজুর বিক্রি শুরু করেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। নিত্যপণ্যের বাজারের তুলনায় দামে সস্তার পাশাপাশি ভালো মানের পণ্য পেয়ে খুশি ক্রেতারা।
নগরীর শেওড়াপাড়ায় ট্রাকের একটু দূরে সিএনজি চালিত অটোরিকশা রেখে টিসিবি’র পণ্য কিনছিলেন চালক আব্দুল ওহায়িদ মিলন। তার পরেই ৬ থেকে ৭ জন লাইনে দাঁড়িয়ে নিত্যপণ্য কিনছিলেন।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মিলন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজারে মোশোরিরি(মশুর) ডাল ১১০ ট্যাকা। এখানে ৯০ ট্যাকায় কিনছি। জিনিসের(পণ্য) দামও কম, মানও ভালো’।
শুধু মিলনই নন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা টিসিবি’র সস্তার এসব পণ্য কিনতে ভিড় জমিয়েছে। প্রথম দিনে নগরী ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজারের তুলনায় দামে সস্তার পাশাপাশি পণ্যের মানও ভালো। অন্যান্য বাজারের তুলনায় কেজিপ্রতি টিসিবি’র পণ্য ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে চিনি ৬০ টাকা থেকে ৬৩ টাকা আর টিসিবি’র ট্রাকে কেজিপ্রতি ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কেজিপ্রতি ছোলা ৮০ টাকা, টিসিবি’র ট্রাকে ৭০ টাকা, খেঁজুরও টিসিবি’র ট্রাকে ২০ টাকা কম নেওয়া হচ্ছে কেজিতে। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য ৫০ টাকা কমিয়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮শ’ ৫০ কেজি পণ্য বিক্রি করা যাবে। ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি চিনি, ১৫০ থেকে ২০০ কেজি করে মসুর ডাল, ৪০০ থেকে ৮০০ কেজি ছোলা, ৫০ কেজি খেঁজুর এবং ৩০০ থেকে ৪০০ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করা হবে।
বেলা ১১টা থেকেই এসব ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি ভালো হচ্ছে। বিকেল তিনটা নাগাদ ১ হাজার ২শ’ কেজি পণ্য বিক্রি করা হয়েছে শেওড়াপাড়ায় রাখা টিসিবি’র ট্রাক থেকে। এখানে দায়িত্বরত ক্যাশিয়ার আশরাফুজ্জামান পরাগ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথম দিনে ক্রেতাদের চাহিদা অনেক বেশি। কয়েক দিন পার হলে আবার চাপ কমতে পারে। অন্যান্য বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম কম হওয়ার কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ছাড়াও প্রাইভেটকার থামিয়ে অনেকে পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ১ হাজার ৮শ’ ৫০ কেজি পণ্যের মধ্যে তিন ঘণ্টায় ১ হাজার ২শ’ কেজি পণ্য বিক্রি করে ফেলেছি’।
ঢাকায় যেসব স্থানে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রেসক্লাব, সচিবালয় গেট, বাংলাদেশ ব্যাংক বা শাপলা চত্বর, কাপ্তানবাজার, ছাপড়া মসজিদ ও পলাশী বাজার, নিউমার্কেট বা নীলক্ষেত বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, ঝিগাতলা বাজার, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, খিলগাঁও বাজার, বাসাবো বাজার, শাহজাহানপুর বাজার, ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, রামপুরা বাজার, নতুন বাজার, বাড্ডা, বনশ্রী বা মেরাদিয়া বাজার, মাদারটেক বা নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে, দৈনিক বাংলার মোড়, মতিঝিল বক চত্বর, দিলকুশা, সায়েদাবাদ বা যাত্রাবাড়ি, গেণ্ডারিয়া বাজার, খামারবাড়ি, কলমিলতা বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, শ্যামলী বা কল্যাণপুর ওভারব্রিজ, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১নং মাজার রোড ও গাবতলী, মিরপুর-১০ গোল চত্বর, কালশি বাজার, রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট কচুক্ষেত এবং বিমানবন্দর হাজিক্যাম্প।
উত্তরার রাইসা ফার্নিচারের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম কালশি বাজারে টিসিবি’র ট্রাক থেকে দুই কেজি ছোলা ও এককেজি চিনি কিনেছেন।
শহিদুল বলেন, ‘অন্যান্য বাজারে কেজিপ্রতি চিনি ৬০ টাকার বেশি, এখানে মাত্র ৪৮ টাকা। দুই কেজি ছোলা কিনেও ২০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আমি বাজারের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি, পণ্যের মানও এক’।
একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫ কেজি ছোলা এবং ১ কেজি খেঁজুর কিনতে পারবেন।
টিসিবি’র পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, সারা দেশে ১৭৯টি ট্রাকে করে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২টি, চট্টগ্রামে ১০টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি করে এবং প্রতিটি জেলা সদরে দু’টি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। পবিত্র রমজানে চাহিদা অনুযায়ী ডিলারদের পণ্য সরবরাহ করা হবে। টিসিবি’র পর্যাপ্ত নিত্যপণ্য মজুদ রয়েছে।
টিসিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীরের বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিনে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ডিলাররা জানাচ্ছেন, ক্রেতা সমাগম ভালো। আমাদেরও যথেষ্ট পরিমাণে পণ্য মজুদ আছে। ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে আমরা প্রস্তুত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর