ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে যারা রিজার্ভ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখভাল করেন তাদের পরিবর্তনের কথাও বলা হয়েছে।
সোমবার (৩০ মে) দুপুরে সচিবালয়ে ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
ওই তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্যই ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। কারণ বর্তমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায়ই এ চুরি হয়েছে। এছাড়া, চুরির সময় যারা বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন তারাও এতে জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্য মিলছে।
ফরাস উদ্দিন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা, উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, জিএম আব্দুল্লাহ ছালেহীন, শেখ রিয়াজউদ্দিন ও রফিক আহমেদ মজুমদারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অবহেলার কারণে সার্ভার হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। রিজার্ভ চুরি করতে এরা হ্যাকারদের সহায়তাও করেছেন।
এছাড়া, গভর্নর সচিবালয় বিভাগে কর্মরত মইনুল ইসলাম এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের শেখ রিয়াজউদ্দিন তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ‘কমপ্রোমাইজড’ হতে দিয়ে মহাবিপত্তির সৃষ্টি করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুবায়ের বিন হুদা ও জি এম আব্দুল্লাহ ছালেহীনের ইউজার আইডির পাসওয়ার্ড চুরি করে তা ব্যবহার করেছে হ্যাকাররা। এমন কি এরা আগেই জানতে পারেন তাদের পাসওয়ার্ড চুরি হয়েছে। কিন্তু তারা সেটা আমলে নেননি। এতে তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন। কাণ্ডজ্ঞানহীনের মত কাজ করেছেন। সরকারি কর্মকর্তাও হয়েও এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছে কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনার জন্য সুইফট এর দায় আছে। সুইফট কখনো তার দায় এড়াতে পারে না। তবে টাকা উদ্ধার ও সমস্যা সমাধান করতে সুইফটের সাহায্য নিতেই হবে।
৭৫ দিনের তদন্ত শেষে এই প্রতিবেদন জমা দিতে পারায় বাংলাদেশ ব্যাংককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন।
ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, আমরা তদন্ত করে যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছি তাদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কীভাবে কতো টাকা আদায় করা সম্ভব আমরা একটা আশাব্যঞ্জক চিত্র দিয়েছি।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ১৫ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ওই কমিটি ৩০ দিন পর অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। ৭৫ দিন পর সোমবার এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলো।
এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
এইচএ/