ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার

মিত্সুবিশি’র চাবি রেখে চালকের `চম্পট’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
মিত্সুবিশি’র চাবি রেখে চালকের `চম্পট’

ঢাকা: ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, গাড়িটি কার্নেট সুবিধার। লিগ্যাল কাগজপত্র আছে?’ ‘আছে স্যার’।

‘কোথায়?’ ‘দিয়ে যাবো স্যার। চাবি রেখে দেন, আমি নিয়ে আসছি’।
 
হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ ভবনের সামনে হবিগঞ্জ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এমন কথোপকথন শেষে কোটি টাকার মিত্সুবিশি গাড়ির চাবি রেখে পালালেন চালক।
 
পরে কার্নেট সুবিধায় আমদানি করে ব্যবহার করা বিলাসবহুল গাড়িটি সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহায়তায় জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়।
 
মঙ্গলবার (০৭ জুন) রাত দুইটার দিকে গাড়িটি সিলেট শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়। শুল্কসহ কোটি টাকার গাড়িটি ২০০৭ সালে কার্নেট সুবিধায় আমদানি করা হয়েছে। এরপর থেকে অন্তত তিনটি হাতবদল হয়।
 
গাড়িটির প্রকৃত মালিককে খুঁজে না পাওয়া গেলেও ঢাকা মেট্রো-ম-০০-০৫০১ নম্বরপ্লেট ও এলএনবি অটোমোবাইলস গ্যারেজের নাম উল্লেখ করা রয়েছে। তবে গাড়িটির কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই।
 
গত ২৪ এপ্রিল সারাদেশে যখন কার্নেট ও শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করা গাড়ি জব্দে অভিযান চলছে, তখন শুল্ক গোয়েন্দার কাছে খবর আসে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার লোগাঁও গ্রামে এমন চারটি গাড়ি রয়েছে।
 
শুল্ক গোয়েন্দারা সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় ও র্যাবের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু খবর পেয়ে সরিয়ে ফেলা হয় গাড়ি। খালি হাতে ফিরলেও তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন গোয়েন্দারা।
 
সম্প্রতি তারা খবর পান, মিত্সুবিশি নামে কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার করা বিলাসবহুল একটি গাড়ি হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ ভবনের সামনে রয়েছে। সহায়তা চাওয়া হয় হবিগঞ্জ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের।
 
তথ্য নিশ্চিত হয়ে সোমবার (০৬ জুন) হবিগঞ্জ কাস্টমস কর্মকর্তারা জেলা পরিষদ ভবনের সামনে গাড়িটি পান। চালককে জিজ্ঞাসা করতেই শক্ত গলায় প্রতিবাদ, ‘গাড়ির কাগজপত্র সব আছে। দেখাতে পারবো। আপনাদের তথ্য ভুল’।
 
নজরদারিতে রেখেই আবার তথ্য যাচাই। নিশ্চিত হওয়া গেল, এই সেই গাড়ি। চালককে (চালক বা মালিক হতে পারেন) বলা হল, ‘গাড়িটি কার্নেট সুবিধার, শুল্ক গোয়েন্দার কর্মকর্তারা আসছেন। গাড়িটি দিয়ে যেতে হবে’।
 
চালক বেচারা অবস্থা বেগতিক দেখে এবার ধরা গলায় বললেন,‘চাবি দিয়ে যেতে পারি। তবে কাগজপত্র সব নিয়ে শিগগিরই আসবো’।
 
কর্মকর্তারা তো তার মতিগতি দেখে চালককে যে ছাড়বেন না, সেটা আঁচ করতে পারলেন তিনি। শেষে বাঁচতে মোবাইল নম্বর দিয়েই চম্পট। গাড়িটি হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সামনে নিয়ে রাখা হল।
 
শুল্ক গোয়েন্দার সিলেট টিম, সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান ও হবিগঞ্জ পুলিশের সহায়তায় গাড়িটি সিলেট শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
 
মঙ্গলবার মধ্যরাতে গাড়িটি আনতেই পথেই নষ্ট। শেষ পর্যন্ত পিক-আপ ভ্যানের সঙ্গে বেঁধে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাত দুইটায় আনা হয় সিলেট শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে।
 
এরপর চালকের নম্বরে দেওয়া হয় অসংখ্যবার ফোন। তবে ফোন রিসিভ করা হয়নি। ২০০৭ সালে আমদানি করা গাড়িটির মডেল TK-AB2-EN280, ID NO-MFD.IN 051405/2007, TAKATA Corporation, Chasis No-JMALYV98W7J000618, Engine No-4M410CAB6305।
 
এ গাড়ি আমদানিতে ৬৪০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য। শুল্কসহ সিলভার রঙের চার সিটের বিলাসবহুল গাড়িটির মূল্য প্রায় কোটি টাকা। কার্নেট সুবিধায় আমদানির পর গাড়িটি ফেরত নেওয়া হয়নি।
 
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, স্বেচ্ছায় কেউ এ ধরণের অপব্যবহার করা গাড়ি ফেরত দিলে তাকে সহযোগিতা করা হবে। এ ধরনের বহু গাড়ি রয়েছে। লুকিয়ে রাখা যাবে না, ফেরত দিতেই হবে।
 
কার্নেট বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি কিনলে যে কেউ বিপদে পড়বেন। সেজন্য দেখে-শুনে গাড়ি কেনার আহ্বানও জানান তিনি।
 
তথ্য অনুসারে, গাড়ি ব্যবহারকারী ফয়েজ আমিন চৌধুরী রাসেল। তিনি একজন ব্যবসায়ী। এ ব্যবসায়ীর দখলে থাকা অন্য গাড়িগুলোও জব্দের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, কার্নেটের মাধ্যমে গাড়িটি আনা হয়েছিল। পরে শর্ত ভঙ্গ করে এটি বিদেশে ফেরত যায়নি। এতোদিন এটি অবৈধভাবে স্থানীয় একটি গ্যারেজ নম্বর (ঢাকা মেট্রো ম ০০-৫০১) ব্যবহার করে চালানো হয়েছিল। গাড়িটির মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।