কেরাণীগঞ্জ (ঢাকা): ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টসপল্লী। ক্রেতা, বিক্রেতা ও কুলিদের হাঁকডাকে এখন মুখরিত ঈদের পোশাকের জন্য বিখ্যাত গার্মেন্টসপল্লীটি।
দেশের অভ্যন্তরীণ পোশাকের চাহিদার সিংহভাগ মেটাচ্ছে কেরাণীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লীর তৈরি পোশাক। সারা দেশের চাহিদা মেটাতে পোশাক মালিক-শ্রমিকরা কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। কারোরই যেন দম ফেলার ফুসরত নেই।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব আগানগর ও কালীগঞ্জ এলাকায় প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। খেজুরবাগ, চরখেজুরবাগ, অলিনগর, কৈবর্তপাড়া, চরকুতুব, আমবাগিচাসহ বিভিন্ন গ্রামেও গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানা। কারখানাগুলোতে তৈরি হয় মৌসুম অনুযায়ী শার্ট, টি-শার্ট, পাজামা, পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ মেয়েদের সব ধরনের সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, জিন্সের প্যান্ট, বোরখা ও শীতবস্ত্র।
চার লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছেন এ গার্মেন্টসপল্লীতে। দেশের বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষ থাকলেও এ এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে নেই কোনো অসন্তোষ। এখানে মালিক-শ্রমিকরা একসঙ্গে আনন্দমুখর পরিবেশে কাজ করেন।
দিন দিন এখানকার তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েই চলেছে। ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে এসব পোশাক ঢাকাসহ সারা দেশের অভিজাত মার্কেট, সুপার মার্কেট, শপিংমল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোয় শোভা পাচ্ছে।
প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি পোশাক নিতে ভিড় করছেন সারাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
নানা ধরনের বাহারি পোশাকের মধ্যে কেরাণীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লীর বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে জিন্স প্যান্ট। ঈদ বাজারকে সামনে রেখে জিন্স প্যান্ট বিক্রির ধুম পড়ে গেছে। এখানকার তৈরি প্যান্টগুলোর দাম ৯০ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বছরজুড়েই কেরাণীগঞ্জের তৈরি পোশাকের চাহিদা থাকে। তবে রোজার ঈদ ও শীত মৌসুমে চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবারের ঈদেও দ্বিগুণ বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে তিনমাস আগে থেকেই পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেছেন তারা।
এ বছর কেরাণীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লীতে তৈরি পোশাক বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
এম আর ফেব্রিক্সের স্বত্ত্বাধিকারী হাজী মো. রফিক বলেন, ‘ঈদের বাজার ধরতে আমরা দু-তিন মাস আগে থেকে জিন্স প্যান্ট তৈরি শুরু করেছি। এবারের ঈদে ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় রেখে চীন ও থাই ডিজাইনের আদলে উন্নতমানের প্যান্ট বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব প্যান্টের দাম রাখা হয়েছে ৭০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
‘আমাদের তৈরি পোশাকের দেশব্যাপী চাহিদা থাকলেও মূলত রাজধানীর বড় বড় মার্কেট ও বিপণিবিতানে শোভা পাচ্ছে এসব পণ্য’।
জেলা পরিষদ মার্কেটের মুসলিম কালেকশনের মালিক হাজী মো. মুসলিম জানান, আমাদের তৈরি শার্ট সব সময়ই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এবার আমরা ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবিও তৈরি করেছি। ইতোমধ্যেই আমাদের তৈরি পাঞ্জাবি ক্রেতাদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি, এ বছর আমরা গত বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেচা-কেনা করতে পারবো’।
রংপুর থেকে আসা বস্ত্র ব্যবসায়ী মো. জালাল শেখ বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ ও শীতের আগে আমি কেরাণীগঞ্জের তৈরি পোশাক কিনতে আসি। এখানে শূন্য থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের সব ধরনের তৈরি পোশাক পাওয়া যায়, যা সারা দেশের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না’।
পূর্ব আগানগরের আলম শপিং প্লাজার চিশতিয়া গার্মেন্টের প্রোপ্রাইটর মো. আবদুল আজিজ বলেন, ‘তৈরি পোশাক প্রস্তুতে আমরা উন্নত বিশ্বের চেয়ে কোনো অংশে কম নই। আশা করি, আমরা ভবিষ্যতে আরো উন্নত মানের পোশাক তৈরি করতে পারবো’।
খুলনা থেকে আসা বস্ত্র ব্যবসায়ী মো. ইমান আলী বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জে বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সমমানের প্যান্ট তৈরি করা হয়। দাম কম হলেও মানের দিক দিয়ে সেরা। এখান থেকে জিন্স প্যান্ট কিনে নিয়ে বিক্রি করলে লাভও ভালো হয়’।
কেরাণীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের তৈরি পোশাকের প্রায় ৬০ শতাংশ ও জিন্স প্যান্টের প্রায় ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে কেরাণীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লী। ঈদকে সামনে রেখে কেরাণীগঞ্জে সব মিলিয়ে ১০ হাজার গার্মেন্টস কারখানা ও তৈরি পোশাকের দোকানে প্রায় চার লাখ শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন।
সপ্তাহখানেক আগে এ এলাকায় তৈরি পোশাকের বাজার জমেও উঠেছে। এ বছর তৈরি পোশাক বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৬
এএসআর