এর আগের তিনটি বৈঠকের দু’টি ঢাকায় এবং একটি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক আচরণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) যখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে তখন টিকফার মতো দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রায় এক যুগ ধরে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনার পর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল। রানা প্লাজা ধসের এক বছরের মাথায় এই বৈঠকে তখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় বাংলাদেশের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ নিয়ে।
এই বৈঠকের আগেই জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা স্থগিত করে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই জিএসপি ফিরে পাওয়া ছিল বৈঠকটির অন্যতম এজেন্ডা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করলেও জিএসপি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
সেসময় কর্মপরিবেশ নিয়ে তিনটি কমিটি এবং বাংলাদেশের বাজার সুবিধা নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে অনেক অজানা বিষয় বৈঠকে পরিষ্কার হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ।
দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটনে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর। এই বৈঠকে জিএসপি অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ওই বৈঠকটিতে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার, সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট, বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ, বাজার সুবিধা, দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীক আচরণ, ব্লু ইকোনমি, বালি প্যাকেজ ও পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিয়ে আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন, বৈঠকে এমনটি জানান বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। পরে অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই এই জোট থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।
টিকফার তৃতীয় বৈঠক হয় ঢাকায় ২০১৭ সালের ১৭ মে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল এবং পোশাকের ন্যায্য মূল নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানানোর কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত হতাশ হতে হয়। কেননা, বৈঠকে জিএসপি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। আর পণ্যের ন্যায্য মূল্য এখনও পায়নি বাংলাদেশ। তবে বিনিয়োগ উন্নয়ন নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল।
ওই বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেছিলেন, ডব্লিউটিও নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ সব স্বল্পোন্নত দেশেরই (এলডিসি) যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।
বৈঠকটিতে যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোতে জোর দিয়েছিল। আর এই ঘাটতি কমানোর অর্থ ছিল বাংলাদেশের রফতানি কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো। যা বাস্তবায়নও হচ্ছে বলে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় আমার মনে হয় না বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে পারবে। তবে ডব্লিউটিও দুর্বল হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির গুরুত্ব বাড়ছে। এক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি করা বেশি ফলদায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
যুক্তরাষ্ট্র এবার বৈঠকটিতে অ্যামাজন.কম বাংলাদেশে চালুর প্রস্তাব দেবে উল্লেখ করলে আবু আহমেদ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এটিকে আমি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি না। তবে অ্যামাজনকে এদেশে অনুমতি দিলে তাতে যেনো বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শেয়ার থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
এজেড/টিএ