ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফেনী নদীর উপর চলছে দেশের প্রথম মৈত্রীসেতুর কর্মযজ্ঞ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
ফেনী নদীর উপর চলছে দেশের প্রথম মৈত্রীসেতুর কর্মযজ্ঞ

রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে ফিরে: কুয়াশার চাদরে মোড়ানো চারপাশ। প্রচণ্ড শীতের এমন বৈরী আবহাওয়ায়ও পাহাড়ি সমতল জনপদটির রূপ ছিটেফোঁটাও কমেনি। রাস্তার পাশের চা-বাগান আর লেকের উপর ঝুলন্ত সেতুতে কাটানো সকালটাকে দুর্দান্ত মনে হয়েছে। বলছি, পাহাড়ি সমতল জনপদ রামগড়ের কথা। এর আগেও অনেকবার যাওয়া হয়েছে রামগড়ে। তবে এ যাত্রায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফেনী নদীর উপর দেশের প্রথম মৈত্রীসেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখা। পৌর শহর থেকে কিছুটা পথ হেঁটে মহামুনি এলাকায় পা রাখতেই চোখে পড়লো কর্মযজ্ঞ। দেখে মনে হলো বেশ জোরেশোরেই চলছে কাজ।

এপারে বাংলাদেশের রামগড় উপজেলা আর ওপারে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম অঞ্চল। দু’দেশের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে ফেনী নদী।

এ নদীর উপর দিয়েই নির্মিত হচ্ছে দেশর প্রথম মৈত্রীসেতু-১।

সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বহুল প্রতীক্ষিত মৈত্রীসেতুর নির্মাণ কাজ। মৈত্রীসেতুর কর্মযজ্ঞ।  ছবি: বাংলানিউজকর্মরতরা জানালেন, ইতোমধ্যে সেতুটির ৭৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদীর দু’পাশে ঘুরে দেখা যায়, স্থাপিত ১০টি পিলারের উপর স্প্যান বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। চলছে স্প্যানের উপর রড বাঁধাই ও ঢালাইয়ের কাজ। ভারত সীমান্তে তিনটি পিলারের উপর ও একটি অ্যাপার্টমেন্টের ঢালাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের অংশে তিনটি পিলারের উপর ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি চারটির উপর ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও নদীর দুইপাশে অ্যাপার্টমেন্টে মূলসেতুর কাজ নির্মাণাধীন। দ্রুতই এটি শেষ হবে, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে, জানিয়েছেন মৈত্রী সেতুর ভারতীয় প্রকৌশলী লোকেশ দাইয়া।

সেতু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের প্রথম মৈত্রীসেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দরের কাজ শুরু হবে। এতে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, বৈদেশিক বাণিজ্যে এগোবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।

মৈত্রীসেতুর কর্মযজ্ঞ।  ছবি: বাংলানিউজবাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড এক্সপোর্ট ফেয়ার (বিআইটিএফ) উদ্বোধনকালে গত ২৭ অক্টোবর এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়, এ স্থলবন্দরটি চালু হলে অনেক দূরত্ব কমে আসবে, সহজ হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এদিকে গত ১৬ জুন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীসেতু-১ ও রামগড় স্থলবন্দর এলাকার নির্মাণাধীন কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। রীভা গাঙ্গুলি দাশ ওই সময় রামগড়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মনিপুর মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল এই সাত রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার বহু আগেই রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর স্থাপনে উদ্যোগী হয়। আর এ বন্দর চালু হলে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রামগড় সফরকালে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রামগড় স্থলবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক (রামগড়-বারৈয়ারহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার) উন্নয়নের কাজ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। এজন্য খরচ পড়বে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনার বিষয়টি সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন। অন্যদিকে ত্রিপুরার আগরতলা থেকে সাব্রুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

মৈত্রীসেতুর কর্মযজ্ঞ।  ছবি: বাংলানিউজ৬ জুন ২০১৫ সালে ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনী নদীর উপর রামগড়-সাব্রুম মৈত্রীসেতু-১ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

ভারতীয় মুদ্রা ৯২ কোটি রুপি ব্যয়ে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর ডিআরএ কন্সট্রাকশন মৈত্রীসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪১২ মিটার। মূলসেতুর প্রস্থ ১০ মিটার। দু’পাশে ফুটপাত চার মিটারসহ মোট ১৪ মিটার প্রস্থ। সেতুটিতে মোট ১০টি পিলার ও দুইটি অ্যাপার্টমেন্ট বসানো হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে বসেছে সাতটি পিলার ভারতের অংশে বসেছে তিনটি পিলার, আর অ্যাপার্টমেন্ট দুইটি বসেছে নদীর দুইপাশের মূল সেতুতে।

সরকার ঘোষিত ১৭৬টি স্থল বন্দরের বেশকিছু ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রামগড় স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ দীর্ঘদিন ফাইল চাপা থাকলেও ২০১০ সালে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজে পুনরায় গতি আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।