অন্যদিকে সর্বশেষ ২০১০ থেকে ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মাঝে চতুর্থবারের মতো ২০২১ সাল পর্যন্ত এর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
খুলনা-মংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে আইএমইডি’র পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা-মংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। প্রতিবেদনের কপিও সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, যাতে করে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়।
আইএমইডি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, খুলনা-মংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য হবে ৮৬.৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪.৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ থাকবে। এছাড়া রূপসা নদীর ওপর হজরত খানজাহান আলী সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫.১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতু।
আশা করা হচ্ছে, এই প্রকল্প সমাপ্তির পর সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। দেশের শিল্প ও বাণিজ্য প্রসারের ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে ও দারিদ্র কমে আসবে। ফলশ্রুতিতে তা জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ হওয়ার কারণে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে দেশে-বিদেশি পর্যটক যাতায়াতেও সুবিধা হবে। কিন্তু বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সুফল মিলছে না।
আইএমইডি’র প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এর মাঝে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ। কন্সট্রাকশন অব ইমব্যাংকমেন্ট, ট্র্যাক, অল সিভিল ওয়ার্কস, মেজর অ্যান্ড মাইনর ব্রিজ কাজের অগ্রগতিও ভালো না। অন্যদিকে রূপসা সেতুর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৩ শতাংশ।
প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হতে বেশি সময় লাগার প্রধান কারণ জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, কাজের মাঝামাঝি এসে পরামর্শক পরিবর্তন ইত্যাদি। এছাড়া কিছু জটিল নন টেন্ডার আইটেম যেমন- অত্যাধিক লুজ সয়েল থাকায় ট্রিটমেন্ট, বারবার পাইল ফেইল করায় বেস গ্রাউটিং, ইরকনের মাধ্যমে অধিক সংখ্যাক আনাড়ি সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করাও বিলম্বের কারণ।
বর্তমানে প্রকল্পের কাজ যে গতিতে চলছে তাতে করে পূর্ব নির্ধারিত ২০২০ সালে এর কাজ সমাপ্ত হবে না। ফলে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। বর্তমানে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। রেল লাইনের কাজ চলমান। এছাড়া নির্মিতব্য ৮টি স্টেশনের মধ্যে দুটির স্টেশন বিল্ডিং ছাদ পর্যন্ত করা হয়ে গেছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান। তবে সরেজমিনে এখনও ট্র্যাক ও সিগন্যালিং নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্পের রেল লাইন নির্মাণ কাজ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। এ প্রেক্ষাপটে টার্গেট অনুযায়ী দ্রুত কাজ করার তাগিদ দিয়েছে আইএমইডি।
সূত্র জানায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পের কাজ তিনটি অংশে বিভক্ত। এর একটি রেলসেতু, একটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। এছাড়া ২১টি ছোটখাটো ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে এর আওতায়। ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলায় ৮টি স্টেশন হবে।
প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও নকশা জটিলতা সংক্রান্ত কারণে কাজে ধীর গতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট অংশের চারটি স্টেশনের ভূমি অধিগ্রহণের আবেদনে ভূমি মন্ত্রণালয় এখনও সাড়া দেয়নি। ফলে প্রকল্পের কাজ ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের বিলম্ব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান। এক মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এমন ইতিহাস আছে বলে আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
এমআইএস/এইচজে