ফেনী: দিন ঘনিয়ে আসছে ঈদুল আজহার। আর মাত্র ৫দিন বাকি থাকলেও পশুর হাটগুলোতে বিকিকিনি নিয়ে এখনও তেমন জমেনি।
চরম অর্থকষ্টে থাকা মানুষগুলো চিন্তায় আছেন পশু কোরবানি দেওয়া নিয়ে। অপরদিকে খামারি এবং পশু ব্যাপারীরাও শঙ্কায় আছেন পশুর ভালো পাওয়া দাম নিয়ে। এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবারের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে।
এদিকে অ্যাকচুয়াল এবং ভার্চ্যুয়াল দুই হাটেই একই অবস্থা এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর বাজার নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে শঙ্কা। গো-খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি খামারির দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। সঠিক দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে বিভিন্ন খাত থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবেন বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
ফেনীর পরশুরাম চৌধুরী এগ্রো ফার্মের মালিক ও পৌরমেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৯ বছরের চিত্র আর চলতি বছরের চিত্রে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এবছর মার্চ মাস থেকে করোনায় দেশের সবকয়টি গরু বাজার বন্ধ ছিল। এজন্য আমরা খামারিরা গরু কিনতে পারেনি। প্রতিবছর তিনি ৫শ থেকে ৬ শতাধিক গরু কোরবানির জন্য তার খামারে মজুদ রাখেন কিন্তু এবছর ২শ গরুর বেশি তিনি মজুদ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, এবছর কোরবানি পশুর বাজার কোনো পরিসরে হবে আমরা এখনো নির্দেশনা পাইনি।
ভারতীয় গরুর প্রবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরশুরামের বক্স মাহমুদেও খেজুরিয়া ও মির্জানগর দিয়ে প্রতিরাতে ৬শ থেকে ৭শ গরু প্রবেশ করে। এভাবে ভারতীয় গরু এলে খামারিদের সব কষ্ট, শ্রম ও পুঁজি বৃথা যাবে। অর্থনৈতিক মন্দা, মানুষের অনাগ্রহ নতুন অভিজ্ঞতা। তাই আশঙ্কা রয়েছে পুঁজি ফিরে না আসার।
ছাগলবিক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, এবছর ছাগলের তুলনায় খাবারের দাম অনেক বেশি। তুলনামূলকভাবে গত কয়েকবছর ধরে ছাগলের পড়তি দাম আরও হতাশ করছে। এ অবস্থায় ঋণের বাড়তি চাপ যোগ হতে পারে। জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায় অন্যান্য বছর মহিষের চাহিদা বেশি ছিল। এবছর কি হয় সেটি নিয়ে বিক্রেতারা শঙ্কায় আছেন, কারণ মহিষ আকারে বড় এবং দামেও বেশি হয়। তাদেরও দুশ্চিন্তার কারণ ক্রেতাদের আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়া।
হাফেজ মো. নোমান নামে একজন ব্যবসায়ী বাংলানিউজ বলেন, তীব্র আর্থিক সংকটকালে কোরবানির বিষয়টি যোগ হয়েছে। সামাজিকতা রক্ষার্থে কোরবানির পশু কিনতে হবে। তবে অন্যবারের চেয়ে কম দামে কোরবানি দিতে হবে। এবছর কোরবানি উপলক্ষে গরু ও খামারের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে সে তুলনায় বাড়েনি চাহিদা। জেলায় কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য।
খামারিরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হওয়ায় এবং করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাটগুলোতে ক্রেতা কম দেখা যাচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, জেলায় মোট ছোট বড় গবাদিপশু খামার রয়েছে চার হাজার তিনশ ৩৯। ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় মোট ৬৭ হাজার গরু, মহিষ এবং প্রায় ১৩ হাজার ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা রয়েছে। গবাদিপশু পালনকারীদের কাছে ৬১ হাজার ৯৭৯টি গরু ও মহিষ এবং ১৩ হাজার ৮১১টি ছাগল ও ভেড়া মজুদ রয়েছে। চাহিদার তুলনায় ৪ হাজার ২৯২টি গরু ও ছাগল ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর পশু ব্যবসায়ীরা ঘাটতি পূরণের জন্য অন্য জেলা থেকে গরু, ছাগল কিনে চাহিদা পূরণ করেন।
তিনি আরও বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে তিনি ধারণা করছেন করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে অথনৈতিক সংকট থাকায় অনেকে কোরবানি না করার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে পশু বিক্রির পরিমান কমে গিয়ে উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়:০৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২০
এসএইচডি/এএটি