ঢাকা: করোনা মহামারির সময়ে ঋণ সুদহার কমিয়েও বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে সিটি ব্যাংক। ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত ৯ শতাংশ সুদ হার বাস্তবায়নের ফলে বছরের প্রথমার্ধে ঋণ সুদ থেকে ব্যাংকটির আয় দাঁড়িয়েছে ১২৪৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনের তুলনায় ৩৫.৭ কোটি টাকা কম।
বৃহস্পতিবার (০৬ আগস্ট) সিটি ব্যাংক থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে এই কম সুদের হার বাস্তবায়িত হলেও গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ঋণ প্রবাহে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। পাশাপাশি, ২০২০ এর প্রথমভাগে গ্রাহকের আমানত সুদ বাবদ ৮৪০.২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে ব্যাংকটি। গত বছরের জুন মাসের তুলনায় এর পরিমাণ ৮১.৭ কোটি (১০.৮ শতাংশ) বেশি। গ্রাহককে দেওয়া আমানতের সুদের গড় হার এখনও অপরিবর্তিত (৫.৫ শতাংশ) থাকলেও ইতিবাচক বিষয় এটা যে, গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত করোনাকালে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোট ২৮২২ কোটি টাকা নতুন আমানত সংগ্রহ করেছে সিটি ব্যাংক।
এছাড়া এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সরকারি তহবিল নির্ভরশীল সুদহীন সেবাখাত থেকে ৪৬১.৭ কোটি টাকা আয় করেছে ব্যাংকটি। এই ক্ষেত্রেও গত বছরের জুন হিসেবে ৪৬.১ কোটি টাকা বেশি আয় এবং বার্ষিক ১৪.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
তবে করোনাকালে অর্থনীতির ধীরগতি এবং কমতি সুদহার বাস্তবায়নে গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথমভাগের মুনাফায় ১৭.২ শতাংশ ঘাটতি দেখছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, করোনাকালে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও লোকবল অপরিবর্তিত রাখার ফলে বছরের প্রথম ভাগে আয় কমেছে। ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় ৪৬ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের জুনের তুলনায় ৫৭.৭ কোটি টাকা কম নিট আয় করেছে।
তিনি আরও বলেন, আয় কমার পেছনে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার ঘাটতি না থাকলেও এবং ব্যাংকের ব্যবসা বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি বাস্তবায়ন এবং করোনাকালে ব্যবসায় খাতের সার্বিক নেতিবাচক প্রভাব এতে ভূমিকা রেখেছে।
জানুয়ারি-জুন সময়কালে সিটি ব্যাংকের মূল সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৪৫১ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে ব্যাংকের ইকুইটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬০৭ কোটি টাকা যা ২.২ শতাংশ বেশি। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সার্বিক ঋণ প্রবাহ গত বছরের জুনের তুলনায় ১৮.৩ শতাংশ বেড়েছে এ ব্যাংকে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মোট ঋণের ৫.৮ শতাংশ খেলাপি থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে জুন নাগাদ সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশ। আগামী দিনে সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং, উইমেন ব্যাংকিং এবং খুচরা পর্যায়ের সেবা কম খরচে আমানত সংগ্রহে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে আমানত গত ছয় মাসে ১৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সময়ে নারী গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৭.৬ শতাংশ।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ঋণ শ্রেণিকরণ, প্রভিশনিং এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বাংকের নীতি ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে মুনাফামুখী বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করবে। জুন মাস পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের এসএমই সেবা কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৬তে এবং এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রের পরিধি বেড়েছে ২১.৭ শতাংশ।
করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনা অর্থায়ন বাস্তবায়নে অংশ নিয়েছে সিটি ব্যাংক। এই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে জুন পর্যন্ত ৭৩১ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২০
এইচএডি