ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পেতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০
প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পেতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সবগুলো শর্তপূরণ করতে না পারায় ঋণ পাচ্ছেন না বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বলছে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা জমা না দিলে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব নয়।

এর ফলে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এখনো অর্থ ছাড় করাতে পারেনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। সাড়ে তিন হাজারের বেশি প্রবাসী যোগাযোগ করলেও কেউ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা জমা দেয়নি বলে দাবি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এতে প্রস্তুতি থাকার পরেও টাকা দেওয়া যাচ্ছে না।

আর বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসীদের সহায়তা করার ইচ্ছা থাকলে কাগজপত্রের জটিলতা থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প উপায় বের করতে হবে।

করোনা ভাইরাস সংকট শুরু হওয়ার পর থেকেই কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে থাকেন প্রবাসীরা। এখন পর্যন্ত দেশে ফিরে এসেছেন প্রায় এক লাখ প্রবাসী। ফিরে আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য দুইশ’ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আরও ৫০০ কোটি টাকা।

৪ শতাংশ সুদের এই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবেন চলতি বছরের মার্চ মাসের পর দেশে ফিরে আসা প্রবাসীরা। এই ঋণ বিতরণ করবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। তবে এখনো এই তহবিল থেকে কেউ ঋণ পাননি।

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়লে এপ্রিল মাসে ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন জিয়াউর রহমান। বিমান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে তিনি আর ইতালিতে ফিরে যেতে পারেননি। ইতোমধ্যে তার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এখন চাইলেও যেতে পারবেন না। এখন দেশেই কিছু করার উদ্দেশ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান জিয়াউর। কিন্তু ব্যাংকের সবগুলো শর্তপূরণ করে তার পক্ষে ঋণ নেওয়া সম্ভব না।

কাতার থেকে আসা প্রবাসী আশিকুর রহমান বলেন, সরকার যতটা সহজে ঋণ দেওয়ার কথা বলেছে। এখানে এসে দেখতে পাচ্ছি বিষয়টা ততটাই কঠিন। আগামী দুই বছরের মধ্যেও ঋণ পাওয়া যাবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহতাব জাবীন বলেন, অনেকেই ঋণের জন্য আসছেন কিন্তু বলতেও পারেন না কত টাকা লাগবে, নিয়ে কী করবেন সেটাও বলতে পারছেন না। হাঁস-মুরগি, গরু পালন, মাছ চাষ, ফুল চাষ, দোকানও দিতে পারেন। সে জন্য একটি প্রস্তাবনা আবেদনকারীকেই নিয়ে আসতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশে থাকায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সর্ম্পকে ধারণা কম প্রবাসীদের। তাই কাগজপত্রের শর্ত পূরণ করা তাদের পক্ষে কঠিন। এ ধরনের প্যাকেজ বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা নেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকেরও।

অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরুর) চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বিদেশ ফেরতদের ঋণ দেওয়ার জন্য শুধু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে দায়িত্ব না দিয়ে অন্য সরকারি ব্যাংকগুলোকেও দায়িত্ব দেওয়া হোক। এতে সবাই ঢাকায় না এসেও সারাদেশ থেকে ঋণ নিতে পারবেন।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের হেড অব মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম শরিফুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত খুব বেশি আবেদন জমা পড়েনি। তাই এটাকে অন্য কোনো ভাবে ব্যবহার করা যায়। যাতে প্রবাসীরাও উপকৃত হবে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকও উপকৃত হবে। বিশেষ করে উপকৃত হতে হবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডেরও। কারণ এই টাকাটা প্রবাসীদের। তাদের টাকাই তাদের দেওয়া হচ্ছে। সেই টাকা যদি কাজে না লাগে দিন শেষে সবাই আমরা ব্যর্থ হব।

করোনা ভাইরাস মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫শ’ কোটি টাকা এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দুইশ’ কোটি টাকাসহ মোট সাতশ’ কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে একজন প্রবাসী সর্বনিম্ন এক লাখ এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনীরুছ সালেহীন বলেন, প্রবাসীরা যাতে সহজে ঋণ পেতে পারেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা সেই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২০
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।