ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইলিশে সয়লাব বরিশালের মোকামে দরপতন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০
ইলিশে সয়লাব বরিশালের মোকামে দরপতন রুপালি ইলিশ। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: ইলিশে সয়লাব বরিশালের পোর্টরোডে বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। আর ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা দরপতনও হয়েছে।

যদিও সরবরাহ বেড়ে যাওয়াতেও খুশি জেলে-ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে দর কমায় ক্ষতির শঙ্কাও রয়েছে তাদের। চলতি মৌসুমে ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার এই সুবিধা এখনও মিলছে না খুচরা বাজারের ভোক্তা পর্যায়ে। অপরদিকে রপ্তানির সুবিধা থাকলেও মোকামে আমদানি হওয়া ইলিশ সংরক্ষণে বেগ পেতে হত না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

তাদের মতে, শুধু সাগরের ইলিশেই এখন চাহিদার ওপরে আমদানি ঘটছে। আবার করোনার প্রভাবে দেশের বাজারে ও সাধারণ ক্রেতাদের কাছে মাছের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। সেক্ষেত্রে এ পরিস্থিতিতে আমদানি দ্বিগুণ হওয়ায় পচন, লোকসান হওয়াসহ নানান শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মৌসুমে এ সময়ে ৮শ থেকে ১ হাজার মণ মাছ এসেছে বরিশালের পোর্টরোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। আবার কয়েকদিন আগেও এ মোকামটি ছিল ইলিশশূন্য। এখন সেই মোকামেই প্রতিদিন আসছে দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ। আবার অনেক দিন তো ৩ থেকে ৪ হাজার মণ সাগরের ইলিশের দেখা মিলে এই মোকামে। আর এ কারণে সাগরের ইলিশের দরপতন হয়েছে।  

অপরদিকে অভ্যন্তরীণ নদীর ইলিশের আমদানি কম থাকায় সেগুলোর দাম এখনও কিছুটা বেশি। যদিও কয়েকদিন পরে নদীতেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে এবং এর ধারাবাহিকতা ডিমওয়ালা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য দফতরের উপ-পরিচালক মো. আনিছুর রহমান।

আড়তদাররা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ বৈশাখ মাসের দিকে তেমন ইলিশের দেখা মেলেনি। তবে এখন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়টাকে ইলিশের ভরা মৌসুম বলা হয়।  এ সময়টাতে ইলিশের আমদানি অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে।
 
এদিকে রপ্তানি বন্ধ থাকার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মাছ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই বাজারে চাহিদার বেশি মাছ এলে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। যদিও বেশি আমদানি থাকায় কমেছে মাছের দর। করোনাকাল আর আমদানি বেশির হওয়ার ফলে সবমিলিয়ে গত বছরের থেকে বর্তমান সময়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।  

জেলে ও আড়তদারদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে অন্তত ভরা মৌসুমে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

যদিও রপ্তানির অনুমতির বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস।

তিনি আরও জানান, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। যদিও এর আগে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা ১৭ থেকে ১৮ দিন সমুদ্রে যেতে পারেননি। এই সময়ের মধ্যে ইলিশ অনেক বড় হয়েছে। এর মধ্যে ইলিশ ধরার দুটি জো ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় দুটি জোতেই ইলিশ শিকার হয়নি। এখন জেলেরা ইলিশ শিকার করতে যাচ্ছেন। এজন্য সব ইলিশ একসঙ্গে ধরা পড়ছে। তাই মোকামগুলোতে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। কমেছে সাগরের ইলিশের দামও। তবে নদীর ইলিশ এখনও উঠতে শুরু করেনি। নদীর ইলিশের দামও বেশি। কিছুদিনের মধ্যে নদীর ইলিশের আমদানিও বেড়ে যাবে বলে আশাবাদীব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে পোর্টরোডের আড়তদার মো. জহির সিকদার বাংলানিউজকে জানান, শনিবার মোকামে অন্তত ৪ হাজার মণ ইলিশ এসেছে। এর বেশিরভাগ সাগরের। একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ আসায় দরপতন হয়েছে।  

জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, এত পরিমাণ ইলিশ আসছে, রাখার জায়গা নেই। সংরক্ষণের জন্যও নেই কোন হিমাগার। এ কারণে কম দামে ছেড়ে দিতে হচ্ছে ইলিশ।

মাছ ব্যবসায়ী মাসুম জানান, হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাব। গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরের ইলিশই বেশি আসছে। দিন যত সামনে এগোবো তত বেশি মাছ ধরা পড়বে। কিন্তু সংরক্ষণ না করা গেলে আমদানি বাড়তে থাকলে ধারাবাহিক দরপতনেও লোকসানে পড়বেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা।

আড়তাদার মো. নাসির উদ্দিন জানান, দেড় কেজি সাইজের প্রতি মণ ইলিশ ৩৬ হাজার টাকা, ১ কেজি ২শ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ ৩০-৩২ হাজার টাকা, কেজি সাইজের প্রতি মণ ২৭-২৮ হাজার টাকা, রপ্তানিযোগ্য এলসি সাইজ (৬শ থেকে ৯শ গ্রাম) ২০-২২ হাজার টাকা, ভেলকা (৪শ থেকে ৫শ গ্রাম) সাইজ প্রতি মণ ১৪-১৫ হাজার টাকা এবং গোটলা সাইজ ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৯-১০ হাজার টাকা মণ দরে।  

সাম্প্রতিককালে এত কম দামে পাইকার বাজারে ইলিশ বিক্রি না হলেও, খুচরো বাজারে এর তেমন কোন প্রভাব পড়ছে না বলে জানিয়েছেন ক্রেতা হাবিবুর রহমান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।