ঢাকা: করোনা মহামারির শুরুতে তলানিতে নেমে যাওয়া রপ্তানি আয় জুলাই থেকে আবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো শুরু করেছিল। কিন্তু অক্টোবরে এসে ফের রপ্তানি আয় কমেছে চার শতাংশ।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইপিবির প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে। এই চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ হাজার ২৭৯ কোটি ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ হিসাবেই জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তবে একক মাস হিসেবে অক্টোবর মাসে ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে আয় ছিল ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আর এবার লক্ষ্য ধরা ছিল ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শীতের শুরুতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আবারও লকডাউনসহ বিধিনিষেধের কড়াকড়ি ফিরিয়েছে। আগামী কয়েক মাস রপ্তানি আয়ে এই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। তার প্রভাবেই রপ্তানি আয় হোঁচট খেয়েছে। এছাড়া ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রে কী হবে কে জানে? আশঙ্কা করা হচ্ছে, কঠোর লকডাউন শুরু হবে। তবে কোভিড-১৯-এর প্রভাব শুরু হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু আমাদের রপ্তানি আয়ে খারাপ পরিস্থিতি ছিল। প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি কমছিল। তিন মাসে আড়াই শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মহামারির সময় প্রবৃদ্ধি থাকাই বড় বিষয়।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, মূলত প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি গত অক্টোবরে কিছুটা কমে যাওয়ায় তা পুরো রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। গত চার মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫৮০ কোটি ১৮ লাখ ডলার। অপরদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এই চার মাসে নিট পোশাক রপ্তানিতে ৪ দশমিক শূন্য ৭৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
মহামারিকালে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৩৭ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি বেড়েছে ৪৮ শতাংশের মতো। হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
জানা যায়, মহামারিতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ৩৬ কোটি ডলার। বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ে, জুনে তার চেয়ে অনেক বাড়ে। এরপর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। জুলাইয়ে সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দশমিক ৫৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। জুলাই মাসের ওই আয়ের মধ্য দিয়ে ৭ মাস পর রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মাস অগাস্টে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি এই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় দেশে আসে। কিন্তু চতুর্থ মাস অক্টোবরে এসে ফের ধাক্কা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। ভাবনায় রয়েছেন অর্থনীতিবিদরাও।
করোনা ভাইরাস মহামারির এই সময়ে চলতি অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০) মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম ছিল ২৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
জিসিজি/এএ