ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লবণাক্ত জমিতে অসময়ে তরমুজ মাটি গবেষণার ফল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
লবণাক্ত জমিতে অসময়ে তরমুজ মাটি গবেষণার ফল

ঢাকা: ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার আর মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুষম সার ব্যবস্থাপনায় সুফল পাচ্ছে দেশের কৃষকরা। সেইসঙ্গে ভূমি জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবনে দেশের অনাবদি জমি আসছে চাষাবাদের আওতায়, উৎপন্ন হচ্ছে অধিক ফসল।

মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে নানাভাবে সহায়তা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংস্থা মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। সংস্থাটি প্রতি বছর গবেষণাগারে ৪০ হাজার মাটি-পানির নমুনা বিশ্লেষণ করে সুষম সার দেওয়ার সুপারিশ করছে। প্রকাশ করা হয়েছে ভূমি ব্যবহারের মানচিত্র। নিত্য নতুন কৌশল হিসেবে অনলাইন সার সুপারিশ প্রযুক্তির মাধ্যমেও কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে সেবা। আর লবণাক্ত জমিতে অসময়ে তরমুজ হচ্ছে মাটি গবেষণার ফল।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) এসআরডিআই চলমান গবেষণা কার্যক্রম ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২০ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন করা। এটি আমাদের দেশের কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে। আমাদের মাটির গুণগতমান উন্নয়নের ফলে লবণাক্ত জমিতে অসময়ে তরমুজ হচ্ছে। কৃষকরা সেই অসময়ের তরমুজ বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন।

মহাপরিচালক বলেন, মাটি গবেষণার মাধ্যমে দেশের পাহাড়ি এলাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় চাষাবাদে বিশেষ ভূমিকা রাখা হচ্ছে। এক সময় চাষ হতো না এমন অনেক জমি এখন চাষাবাদের আওতায়। সামনের দিনগুলোতে কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখা যাবে বলে আশা করছি।

সম্প্রতি নতুন অর্গানোগ্রাম অনুমোদন হওয়ার পর সংস্থাটির কাজে এসেছে নতুন গতি। ফলে আরও ১৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং নতুন করে ৬টি ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে এসআরডিআই মোট ৪০টি আঞ্চলিক অফিস ও ২৬টি ল্যাবের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে কৃষকদের।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ১৯৭২ সালে ‘মৃত্তিকা জরিপ বিভাগ’ পরিচিতি লাভ করে এবং তখন থেকেই প্রাথমিক জরিপ কার্যক্রম চলমান থাকে। এরপর ১৯৭৫ সালে দেশের প্রাথমিক মৃত্তিকা জরিপ সম্পন্ন করা হয়। ১৯৮৩ সালে কৃষি পূনর্গঠন, সম্প্রসারণ এবং নতুন নামকরণ করে ‘মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ নামে দেশের কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এই সংস্থা।

আগামী ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস নিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এবার বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘মাটিকে জীবিত রাখি, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি। ’

দেশের ফসল উৎপাদনে সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতিত সারা দেশের প্রাথমিক মৃত্তিকা জরিপ সম্পন্ন করে ৩৪ খণ্ডে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট। দেশের সব উপজেলার জন্য আলাদা ‘ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা’ প্রকাশ করা হয়েছে। নির্দেশিকায় স্থান ভিত্তিক কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ভূমিকা রাখছে। কৃষকদের অধিক সহজবোধ্য করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন ভিত্তিক ৫৩০টি ইউনিয়নের ‘ইউনিয়ন ভূমি, মাটি সার সুপারিশ সহায়িকা’ প্রকাশ করে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া সারের গুণগত মান নিশ্চিত করার স্বার্থে ৭টি বিভাগীয় গবেষণাগারের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৩ হাজার সারের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ১০টি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগারের মাধ্যমে প্রতি বছর ১১২টি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কৃষকের মাটি পরীক্ষা করে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ফসলের জন্য সুষম সার সুপারিশ করা হয়।

পার্বত্য অঞ্চলে ফসল চাষাবাদে ভূমি ক্ষয় একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাকে সামনে রেখে এসআরডিআই বান্দরবানে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে যাচ্ছে। পাহাড়ি এলাকার ভূমি ক্ষয়রোধে কয়েকটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।  

এছাড়াও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লবণাক্ত মাটিতে ফসল চাষের জন্য খুলনার বটিয়াঘাটাতে ‘লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র’ বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- খামার পুকুর প্রযুক্তি, কলস সেচ প্রযুক্তি, দ্বি-স্তর মালচিং, ভুট্টার ডিবলিং ও ট্রান্সপ্লানটিং পদ্ধতি, পলিব্যাগের চারা রোপণ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ, পলিবেডে শাক জাতীয় ফসল চাষ ইত্যাদি। ইতোমধ্যে ডিবলিং পদ্ধতিতে ভূট্টা চাষ দক্ষিণাঞ্চল এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে।

মাটি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রেখে আগামী দিনগুলোতে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষির উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখার কথা বলেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
এমআইএস/এইচএমএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।