ঢাকা: বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় রাজস্ব ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধির ওপর ভর করে তৃতীয় প্রান্তিকে ৩৮ কোটি ৯ লাখ টাকা মুনাফা করেছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি।
প্রতিনিয়ত উদ্ভাবন এবং অ্যানালিটিকসের ওপর জোর দেওয়ায় তৃতীয় প্রান্তিকে রবির রাজস্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকায়।
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকর কর সত্ত্বেও এই সময় রবি ১১৬ কোটি টাকা মুনাফা নিশ্চিত করেছে। এটি কোম্পানিটির দুর্দান্ত পরিচালন দক্ষতারই প্রতিফলন। তবে ন্যূনতম ২ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স না থাকলে এই মুনাফার চিত্র আরো ইতিবাচক হতো।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ার বাজারে প্রবেশের আগ মুহূর্তে তৃতীয় প্রান্তিকে লক্ষণীয় রাজস্ব বৃদ্ধিসহ মুনাফা নিশ্চিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এনালিটিকস-নির্ভর উদ্ভাবনীতে দৃষ্টি দেওয়ার প্রতিফলন রয়েছে এই আর্থিক অগ্রগতিতে; এটি আমাদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তবে উচ্চ কর হার আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেই চলেছে, বিশেষ করে ন্যূনতম ২ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স। আমরা আশা করি সরকার এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে কার্যকর উদ্যোগ নেবে, যেন শেয়ার বাজারে আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের সাথে আকর্ষণীয় মুনাফা ভাগাভাগি করতে পারি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রবির সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ১ লাখ, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৩০ শতাংশ। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে—দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। ৫ কোটি ১ লাখ সক্রিয় গ্রাহকের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৪৭ লাখ, যা মোট গ্রাহকের ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ।
গত প্রান্তিকের তুলনায় এই প্রান্তিকে ভয়েস সেবায় রাজস্বের হার ১২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৯৭২ কোটি টাকা। তবে গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় এই প্রান্তিকে এ খাতে রাজস্ব ৮ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। করোনা মহামারির কারণে টুজি-ভিত্তিক ভয়েস কল সেবায় নেতিবাচক প্রভাবই এর কারণ।
গত প্রান্তিকের তুলনায় ডাটা সেবায় রাজস্ব ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৮৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ডাটা খাতে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ শতাংশ।
গত প্রান্তিকের তুলনায় রবির রাজস্ব ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও কোম্পানির ইবিআইটিডিএ এবং কর পরবর্তী মুনাফা যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং দ্রুত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য নেওয়া জোর পদক্ষেপের কারণে এমনটি হয়েছে, যা এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে লকডাউনের সময় স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।
এ বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) রবির মোট রাজস্বের পরিমাণ ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব বৃদ্ধির হার ১ শতাংশ। এ বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) রবির ইবিআইটিডিএ এবং কর পরবর্তী মুনাফা যথাক্রমে ২ হাজার ৪৫৮ কোটি এবং ১১৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) তুলনায় এ বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ইবিআইটিডিএ এবং কর পরবর্তী মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ৮৭৫ দশমিক ১ কোটি টাকা, যা এই প্রান্তিকের মোট রাজস্বের ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এ বছরের প্রথম নয় মাসে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এই প্রান্তিকে রবি মূলধনী বিনিয়োগ করেছে ৩৬২ দশমিক ৫ কোটি টাকা। এর ফলে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে রবির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াল ১ হাজার ৪৪১ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
এমআইএইচ/এমজেএফ