ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পরিত্যক্ত কচুরিপানায় ঘুচছে বেকারত্ব, মিলছে বৈদেশিক মুদ্রা

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
পরিত্যক্ত কচুরিপানায় ঘুচছে বেকারত্ব, মিলছে বৈদেশিক মুদ্রা কচুরিপানা থেকে নিত্য ব্যবহারিক নানা জিনিসপত্র তৈরি করছেন নারীরা। ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা: খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়ে জন্মানো কচুরিপানা সকলের কাছে পরিত্যক্ত-আগাছা হিসেবে বিবেচ্য হয়ে আসছে দীর্ঘকাল থেকে। বর্তমানে সেই কচুরিপানা বিক্রি হচ্ছে সাত টাকা কেজি দরে।

আর তা থেকে তৈরি হচ্ছে নজরকাড়া নিত্য  ব্যবহারিক নানা জিনিসপত্র। যা এলাকার নারী-পুরুষদের বেকারত্ব মোচনের পাশাপাশি রপ্তানিতে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।

গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রাম ঘুরে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে। চারটি হস্তশিল্প-কুঠিরশিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় আড়াইশত নারী। সেখানে প্রশিক্ষিত নারীরা তৈরি করছে ফুলদানি, ফুলের টব, মাদুর, ঝুঁড়িসহ ঘর সাজানোর নান্দনিক-শৈল্পিক নানা জিনিসপত্র।

কথা হয় ব্যতিক্রমী এ কাজের উদ্যোক্তা মদনের পাড়ার সুভাষ চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশে আমরাই প্রথম এ কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক ভাবে এলাকার ২৫০ জন নারীকে এ কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা নিয়মিত এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ভবিষ্যতে কাজের পরিধি বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে যে চাহিদা তাতে মাসে দুই লক্ষাধিক টাকার কচুরিপানা কিনতে হচ্ছে। অর্থ স্বল্পতার কারণে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় বিকাশ ঘটাতে বেগ পেতে হচ্ছে। কচুরিপানার এসব পণ্যের চাহিদা দেশে কম থাকলেও রপ্তানি হচ্ছে আমেরিকা নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে। এজন্য ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণসহ প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা পেলে কচুরিপানা থেকে উন্নতজাতের হস্তশিল্প তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি এতদাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে তা যথেষ্ট কার্যকর ভুমিকা রাখবে।

কচুরিপানা নিয়ে কর্মরত নারী-কিশোরীরা জানান, গৃহিনীরা সংসারের কাজ শেষে ও কিশোরীরা পড়ালেখার অবসরে কচুরিপানা দিয়ে ফুলদানিসহ নানা সামগ্রী তৈরি করছেন। প্রত্যেকে দিনে ৫-৬টা পর্যন্ত নানা পণ্য তৈরি করতে পারে। এতে তারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় করে থাকেন। এ টাকা দিয়ে সংসারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি লেখাপড়াসহ বিভিন্ন ব্যয় মিটছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এ কাজ করে শিক্ষার্থীরা মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা আয় করছেন। শুধু তাই নয় নারীদের পাশাপাশি এ কাজে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে পুরুষদেরও। তারা জলাশয়- পুকুর থেকে কচুরিপানা তোলা থেকে শুরু করে রোদে শুকিয়ে তা ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে সহায়তা করে থাকেন। এছাড়া পণ্য পরিবহনেও দায়িত্ব পালন করেন তারা।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারমান জেএম সেলিম পারভেজ বাংলানিউজকে জানান, শুকনো কচুরিপানা এক সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হতো। গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন সেই পানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফুলদানিসহ অন্যান্য জিনিস। এতে ওই এলাকার নারীদের যেমন উপকার হচ্ছে, তেমনি গ্রামের তৈরি সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে আমেরিকার মতো উন্নত দেশে। এটা আমাদের এলাকার বেকার পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থানে বিশেষ ভুমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
এসসিএন/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad