ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গত অর্থবছরে ১৬৭৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২১
গত অর্থবছরে ১৬৭৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি

ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২০-২১) ২৩৩টি ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এতে প্রায় ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে।

জরিমানাসহ এ ফাঁকির টাকা আদায় হয়েছে প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ভ্যাট গোয়েন্দার কার্যক্রম মূল্যায়নে উঠে এসেছে এ চিত্র।  

রোববার (৮ আগস্ট) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত অর্থবছরের হিসাব অনুসারে ১৪১টি প্রতিষ্ঠানে অডিট সম্পন্ন হয়। ভ্যাট আইনের ৮৩ ধারায় অভিযান পরিচালিত হয় ৯২টি প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও গত অর্থবছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিয়মিত অডিটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ফাঁকি উদঘাটন করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এ তালিকায় ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তরের চার্টার অব ফাংশন অনুযায়ী নিয়মিত অডিট পরিকল্পনা প্রণয়ন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়ন, গোয়েন্দা তথ্য ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশেষ অডিট এবং অনুসন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে সর্বমোট ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এ অডিটের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান অডিটে উদঘাটিত টাকা স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা।

অডিটে সর্বোচ্চ রাজস্ব উদঘাটিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৪৬২ কোটি ২৮ লাখ, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড ১৪৫ কোটি ১৬ লাখ, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ১২৫ কোটি ৭৩ লাখ, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড ১০০ কোটি ৫১ লাখ, জনতা ব্যাংক লিমিটেড ৪৯ কোটি ৫২ লাখ, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ৪৪ কোটি ২৭ লাখ, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ২৬ কোটি ৩৭ লাখ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ২৫ কোটি ২৮ লাখ, ডিপিএসএসটিএস স্কুল ২৩ কোটি ৩ লাখ, কারিশমা সার্ভিসেস লিমিটেড ২০ কোটি ৯৭ লাখ, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড ২০ কোটি ৬০ লাখ ও এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এই তালিকায়  অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

এছাড়া নিজস্ব জনবল, সোর্স, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ব্যক্তি বিশেষের গোপন অভিযোগপত্র ও এনবিআর থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্যতা যাচাইপূর্বক এ দপ্তরের গোয়েন্দা দল প্রায় ১৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা উদঘাটন করেছে।  

ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান অভিযানে উদঘাটিত ফাঁকির ক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ৮ কোটি ৩ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

এ অভিযানে সর্বোচ্চ রাজস্ব উদঘাটিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আকতার ফার্নিচার ৩৯ কোটি ৬৩ লাখ, মোহাম্মদী ট্রেডিং ৩৮ কোটি ৯৯ লাখ, চারুতা প্রাইভেট লিমিটেড ৩০ কোটি ৩৬ লাখ, উজালা পেইন্টস ইন্ডাস্ট্রি   ২৭ কোটি ১৪ লাখ, হোটেল লেকশোর সার্ভিস লিমিটেড ১৬ কোটি ৯৮ লাখ, ফুড ভিলেজ প্লাস ১৩ কোটি ৫২ লাখ, ফুড ভিলেজ লিমিটেড ১২ কোটি ৯৩ লাখ, ডিবিএল সিরামিক্স লিমিটেড ৬ কোটি ৮৯ লাখ, খান কিচেন লিমিটেড ৩ কোটি ৬০ লাখ ও সুং ফুড গার্ডেন ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ তালিকায় আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ অধিদপ্তর বিভিন্ন মার্কেটে খুচরা পর্যায়ে বিশেষ জরিপ পরিচালনা করে। এ সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ২৫টি মার্কেটের ১৫ হাজার ৪৮২টি দোকানে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেখা যায়, নতুন আইন অনুযায়ী ১৩ ডিজিটের ভ্যাট নিবন্ধনের সংখ্যা খুবই কম।

বিশেষ করে চলতি বছরের মে মাসের ২৪ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১৭টি মার্কেট জরিপে দেখা যায়, মোট ১ হাজার ৯৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫১৬টির নিবন্ধন পাওয়া যায়। বাকি ১ হাজার ৪৫৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো ভ্যাট নিবন্ধন নেই। অর্থাৎ অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের হার প্রায় ৭৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

অন্যদিকে নিবন্ধিত ব্যবসার হার ২২ দশমকি ৬৪ শতাংশ। জরিপ অনুযায়ী মাসে ৫ হাজার টাকার উপরে ভ্যাট দেয় মাত্র ১১৩টি প্রতিষ্ঠান। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন নিয়েছে। তবে তারা নামমাত্র ভ্যাট দিয়ে থাকে।

এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন সূত্রে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার পর মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণের হার মাসে প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব চলতি অর্থবছরে রাজস্ব খাতে লক্ষ্য করা যাবে বলে তারা ধারণা করছে।

ভ্যাট ফাঁকি রোধে নিত্য নতুন কৌশল উদ্ভাবন, কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধকরণ ও অভিন্ন নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গত অর্থবছরে অধিদপ্তর নিরীক্ষা, তদন্ত এবং  অনুসন্ধানের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। এর বিপরীতে ১৪৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার তাৎক্ষণিকভাবে জমা হয়। সার্বিকভাবে এর ফলে মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এ উদঘাটন বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি এবং তাৎক্ষণিক আদায় প্রায় ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন হয়েছিল ৩১৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল প্রায় ৫৭ কোটি টাকা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২১
এসএমএকে/এনএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।