শাবিপ্রবি (সিলেট): বর্তমানে বাংলাদেশে পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং বা ডায়াগনোসিসের অপার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস।
ডায়াগনোসিস হলো এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে মাইক্রো অথবা ন্যানো স্কেলের ডিভাইস বা চিপ ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি নিজ বাসস্থান বা কর্মক্ষেত্রে বসে অথবা নিকটবর্তী ক্লিনিকে দ্রুত সময়ে এবং স্বল্প খরচে রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
বর্তমানে মাইক্রোফ্লুইডিক ভিত্তিক পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালু করেছেন গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যানবেইজ কর্তৃক গবেষণা অনুদানের মাধ্যমে ক্যান্সার এবং সংক্রামক ব্যাধির জন্য পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং বা ডায়াগনোসিস সিস্টেম ডেভেলপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিস টেস্ট করার জন্য গ্লুকোমিটার ও চিপ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে প্রেগনেন্সি টেস্ট স্ট্রিপ ব্যবহার করে গর্ভধারণের পজেটিভ অথবা নেগেটিভ রেজাল্ট নির্ণয় করা হয়। দুই ক্ষেত্রেই ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঘরে বসেই তাদের প্রয়োজন মেটানো যায়।
এই গবেষক বলেন, উন্নত বিশ্বে সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধিকে লক্ষ্য করে প্রচুর পরিমাণে পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিংয়ের গবেষণা চলছে। এসব টেস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেক বেশি লাভবান হতে পারে। কারণ রোগীকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন কম হতে হয়, এবং ক্লিনিক বা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এতে করে অর্থ ও সময় দুদিক থেকেই লাভবান হওয়া যায়।
তিনি জানান, সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণে সারা বিশ্ব যখন ঝুঁকেছে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করার জন্য, যাতে সুনির্দিষ্টভাবে করোনা শনাক্ত করা যায়। ল্যাটেরাল ফ্লো স্ট্রিপ ভিত্তিক অ্যান্টিবডি টেস্ট বাজারে চলে এসেছে। যদিও এটি কনফার্মেটরি টেস্ট নয়, তারপরও এ ধরনের টেস্ট অনেক উপকারী, কারণ ঘরে বসেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, গতানুগতিক আরটি-পিসিআর ল্যাবের প্রয়োজন ছাড়াই পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং মানুষের কর্মস্থলে রোগ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া পৌঁছে দিতে পারে। মাইক্রোফ্লুইডিক টেকনোলজিতে মাইক্রো লিটার আয়তনের সলিউশন বা রিএজেন্ট নিয়ে চিপের মধ্যে অল্প পরিমাণ বস্তু যেমন প্রোটিন বা ডিএনএ অথবা আরএনএ বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্য নির্ণয় করা হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের রিসার্চ বা গবেষণার তেমন প্রচলন নেই। উন্নত বিশ্বে অনেকেই উচ্চ শিক্ষার সময় এই টেকনোলজি নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে এসে গবেষকরা অর্থের অভাবে তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের তেমন কোনো গ্রুপ এখনো এ ধরনের টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে তেমন সুফল পায়নি। এর কারণ এই গবেষণার জন্য চিপ তৈরি বা প্রাথমিক দ্রব্যাদির জন্য প্রচুর অর্থনৈতিক সাহায্য দরকার।
তীব্র আগ্রহের কারণে তিনি স্বল্প বাজেটের প্রজেক্ট এর মাধ্যমে এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন। রাসায়নিক দ্রব্যাদির প্রতুলতা সাপেক্ষে এবং নিরলস কাজ করে যেতে পারলে আগামী বছরের মধ্যে ঘরে বসে মাইক্রোফ্লুইডিক ডিভাইস বা চিপ এবং ল্যাটারাল ফ্লো স্ট্রিপের মাধ্যমে ক্যান্সার অথবা সংক্রামক ব্যাধি শনাক্তকরণের এই গবেষণা সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৩
আরএইচ