রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে গত ১৩ মার্চ পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
তাই বিষয়টি কেবল কালক্ষেপণ উল্লেখ করে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নয়, উত্তেজনা প্রশমনের জন্য গতানুগতিকভাবে এমন কমিটি গঠন করা হয় বলে প্রশ্ন উঠেছে এবারও।
গত ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাস সুপারভাইজারের কথা কাটাকাটির জের ধরে স্থানীয় বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা গেলে স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া করেন। পরে বিষয়টিকে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর স্থানীয় লোকজনের হামলা বলে প্রচার করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে জড়িয়ে পড়েন।
অন্যদিকে রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নেন ওই এলাকার স্থানীয় লোকজন। এতে শিক্ষার্থী, পুলিশ ও সংবাদিকসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। একটি পুলিশ বক্স ও সড়কের পাশের অন্তত ১০টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে। এ ঘটনায় দুদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পরে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করে। আর সংঘর্ষের দুদিন পর গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য হুমায়ুন কবীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই কমিটির তদন্ত শেষ হয়নি এখনও।
তাই এমন তদন্ত কমিটি গঠনকে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা প্রশমনের মাধ্যম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, তারা সব সময়ই দেখেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ঘটনা ঘটলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এর রিপোর্ট শেষ পর্যন্ত কেউ জানতে পারে না। এতে কারও সুপারিশ থাকে কিনা, দায়দায়িত্ব কার থাকে সেটিও তারা পরিষ্কারভাবে জানতে পারেন না। এ ঘটনায়ও হয়তো শেষ পর্যন্ত এমনই হবে।
এদিকে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর তারা রাবি প্রশাসনের কাছে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জোর দিয়ে বলেছিল যে এ প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখবে। তাই তারা সাত কর্মদিবস সময় নিয়েছেন। কিন্তু সেই সাত কর্মদিবসের পর আরও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তারা প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। কেননা অতীতে এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ার কারণেই একই ধরনের অপরাধ বারবার সংঘটিত হয়েছে এ ক্যাম্পাসে।
আর প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, তাদের তদন্ত প্রায় শেষ দিকে। তবে যাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন তাদের অনেকের কাছেই পৌঁছাতে পারছেন না। এ কারণে সময় বেশি লাগছে। এছাড়া রোজার কারণেও কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে রিপোর্ট লেখার কাজ চলছে। শেষ হলে শিগগিরই জমা দিতে পারবেন বলে আশা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৩
এসএস/আরবি