জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কাদের (কাজী মনির)। তার বিরুদ্ধে উঠেছে বেপরোয়া হয়ে ওঠার অভিযোগ।
তার এসব বদকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. কামাল উদ্দিন আহমদের বিশেষ আশীর্বাদে এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কাদের (কাজী মনির)।
প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে প্রায় ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকার পানির পাম্প বসানোর প্রকল্পের কাজ পান অমিত কুমার নামে এক ঠিকাদার। সেই কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক অর্ডার) দেওয়া হয়নি বলে কাজ করেননি তিনি। এদিকে তার অগোচরেই পানির পাম্প বসান কর্মকর্তা কাজী মনির। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই কম গভীরতায় নিজ উদ্যোগে পানির পাম্প বসানোর কাজ করেন জবির এই কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায়। পাম্প তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। মনিরের এমন কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দপ্তরে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তারপরও অজানা কোনো কারণে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তা ছাড়া ট্রেজারার ড. কামালউদ্দিন আহমদের প্রশ্রয়ের বিষয়টি তো আছেই।
বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কাদের (কাজী মনির) বাংলানিউজকে শুধু পাম্প বসানোর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তার ভাষ্য, আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা শুরু হয়ে যাওয়ায় ট্রেজারার পাম্প বসানোর জন্য ইমার্জেন্সি অনুমোদন দিয়েছিল। সেজন্য পাম্প বসানো হয়েছে। আমি এখানে থাকি। তাই আমি শুধু কাজের তদারকি করেছি। কাজটি ঠিকাদারের মাধ্যমে হয়েছে।
তবে কাজের ঠিকাদার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী বলেন ভিন্ন কথা। কাজী মনিরের সঙ্গে সমন্বয় করে পাম্প বসানোর কাজ করেননি বলে দাবি করেছেন ঠিকাদার অমিত কুমার। তিনি বলেন, পাম্প বসানোর কাজ আমি পেয়েছি। আমাকে ক্রীড়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল পাম্প বসাতে। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার (কাজের অনুমতি) না পাওয়ায় কাজ করিনি। কারা পাম্প বসিয়েছে তা আমার জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ওয়ার্ক অর্ডার হওয়ার আগেই কাজী মনির ওখানে পাম্প বসিয়েছিলেন। ওটার কোনো অনুমতি ছিল না। আর গভীরতাও খুব অল্প ছিল। সেজন্য আমরা তুলে ফেলার কথা বলেছিলাম।
বিভিন্ন অপকর্ম করা মনিরের বিরুদ্ধে নতুন ক্যাম্পাসে অনুমতি ছাড়া চাষাবাদের অভিযোগও উঠেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের খেলার মাঠে কয়েক বিঘা জমিতে মনির লাউ, টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, পালংশাক, লালশাক চাষ করছেন। জমিতে পানি দেওয়ার জন্য দেখা গেছে সেচের পাইপও। এসব জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতেই কাজী মনিরের তড়িঘড়ি করে পাম্প বসিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি মুজাহিদনগর মাদরাসার সড়কের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে বেশ কয়েকটি মোটা আকাশমণি গাছ কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সে সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতি ও প্রকৌশলী দপ্তরের কর্মকর্তারা নতুন ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। তখন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে বলা হয়, কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনির এসব গাছ কেটে রেখেছেন। তখন ট্রেজারার বলেন, ‘এখানে ক্যাম্পাসের বিল্ডিং করা লাগবে মনে হয়। ’
কিন্তু কর্মকর্তারা জানান, কাজী মনির গরুর খামার করবেন, তাই গাছ কেটে রেখেছেন। তখন ট্রেজারার চুপ হয়ে যান। সে সময় উপস্থিত একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক ও কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে নতুন ক্যাম্পাসের পুকুরে চুরি করে মাছ চাষ করে সমালোচনার মুখে পড়েন কাজী মনির। ২০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা জবির নতুন ক্যাম্পাসের ২০-৩০টি পুকুরে মাছের পোনা ছাড়েন তিনি। পানি কমে গেলে পাশের পুকুর ও খাল থেকে মাটি কেটে পানি তোলেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই বিষয়টি জানতে পারলে সমালোচনার মুখে মাছ চাষ থেকে সরে আসেন মনির।
সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যবসায় যুক্ত না হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সাভার পরিবহনে কয়েকটি গাড়ি রয়েছে কাজী মনিরের। সদরঘাটে একসময় বাহাদুর শাহ পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, পাম্প বসানো জরুরি ছিল। বাস ব্যবসা জগন্নাথের অনেকেই করেন। মাছ- সবজি চাষ ছোট বিষয়। এগুলো নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। আর আমি কাউকে প্রশ্রয় দিই না। অনেকে অনেকের নাম ভাঙিয়ে খায়। আমি কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত নই।
মনিরের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রকল্প পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইমার্জেন্সি পাম্প বসানোর কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। এটা প্রকৌশল দপ্তর ভালো বলতে পারবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে জমি চাষাবাদ করার জন্য কোনো অনুমতি বা ইজারা দেয় না।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মনিরের ব্যাপারে তিনি অবগত নন বলে বাংলানিউজকে জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৩
এমজে