জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) ভবন নির্মাণে পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানা সংলগ্ন সুন্দরবন এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (আইবিএ) আট বিঘা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটকে ছয় বিঘা ও ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস-কে ছয় বিঘা জমি একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম আইবিএ ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। আইবিএ নিজস্ব অর্থায়নে তাদের এ ভবন নির্মাণ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানা সংলগ্ন এলাকায় আইবিএ ভবনের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বিজ্ঞান কারখানা সংলগ্ন জায়গাটি গাছগাছালিতে পূর্ণ। যেখানে শাল গাছের আধিক্য বেশি। এখানে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হলে পাঁচ শতাধিক গাছ কাটতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনৌজ কান্তি রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বরাবরই দেখি প্রশাসন খেয়ালখুশি মত উন্নয়ন কাজ চালু রেখেছে। প্রশাসন হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়। আইবিএ ভবন নির্মাণের বিষয়েও তারা হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব প্রকাশ করে। আমরা এই ধরনের পরিবেশ ধ্বংসকারী সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মোকাবিলা করবো।
পরিবেশবাদী সংগঠন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারর্ভেশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চল নেই। এখানে উন্নয়ন প্রকল্প হবে, গাছ কিছু কাটা হবে স্বাভাবিক। তবে কোথায় ভবন নির্মাণ করলে কম গাছ কাটা হবে, কোথায় ভবন নির্মাণ করলে জীববৈচিত্র্যের সবচেয়ে কম ক্ষতি হবে, এ বিষয়গুলো প্রশাসনের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত ছিলো। আইবিএ ভবন যেখানে নির্মাণ করতে চাচ্ছে, সেখানে জীববৈচিত্র্য অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু প্রশাসন জীববৈচিত্র্য নিয়ে ভেবেছে কিনা তা আমরা জানি না। প্রশাসন যদি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়েও থাকে, তাহলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজন সবাইকে জানানো দরকার ছিলো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো মাস্টারপ্ল্যান নেই। মাস্টারপ্ল্যান হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথায় ভবন নির্মাণ করা যাবে আর কোথায় করা যাবে না, বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যেত। ফলে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান হতো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ভবন নির্মাণের জন্য আমাদের ওই জায়গা দেওয়া হয়েছে। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্যের দিকে খেয়াল রেখে আমাদের এই জায়গা দেওয়া। আর এখানে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের খুব বেশি জায়গা লাগবে না। আট বিঘা আমাদের দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো আট বিঘার ওপর আমাদের ভবন হবে না। আমরা কিছুটা ফাঁকা জায়গায় আমাদের ভবন করবো। যেখানে খুবই অল্প গাছ কাটার প্রয়োজন পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মে ২৪,২০২৩