ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বসুন্ধরায় নান্দনিক শিক্ষাঙ্গন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
বসুন্ধরায় নান্দনিক শিক্ষাঙ্গন বাঁয়ের ছবিতে নির্মাণাধীন সাত তলা ভবন এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। ডানের ছবিতে প্রকৌশলীর চোখে কাজ সমাপ্তের পর ভবনের সম্ভাব্য চেহারা।

ঢাকা: দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ এবার শিক্ষাক্ষেত্রে আবির্ভূত হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুবিধা সংবলিত স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস।

সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ভূমিকা রাখবে আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়। দেশের এই অগ্রযাত্রার অন্যতম সঙ্গী শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। ব্যবসার পাশাপাশি কল্যাণমূলক কাজে বসুন্ধরা গ্রুপ বরাবরই অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। দেশের খেলাধুলাকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এরই মধ্যে চালু হয়েছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স।  

বিশ্বমানের ক্রীড়া সুবিধা নিয়ে এ কমপ্লেক্সের একাধিক প্রকল্প এখনো চলমান। সব কিছুর পাশাপাশি এবার শিক্ষাক্ষেত্রে আবির্ভূত হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কোল ঘেঁষে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুবিধা সংবলিত ক্যাম্পাস।  

প্রস্তাবিত বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজটিকে একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। এ এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা ছিল। রাজধানীর বুকে সবচেয়ে আধুনিক আবাসিক এলাকা হিসেবে বসুন্ধরা বছরের পর বছর ধরে সমাদৃত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই মহতী উদ্যোগ।  

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান নিজে এই প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা। এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। পরিকল্পনা অনেক দিন আগের হলেও মূল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। প্রায় ১০ বিঘা জমিজুড়ে এক নান্দনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গৃহীত হয়। সেই মহাপরিকল্পনা এখন অনেকটাই বাস্তবায়নের পথে। স্কুলের মূল সাত তলা ভবনটির কাজ প্রায় শেষের পথে।  

আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ নাগাদ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। এর স্থাপত্য নকশা করেছেন স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ। আজকাল শহুরে পরিবেশে শিক্ষাঙ্গনের নিজস্ব খেলার মাঠ স্বপ্নের মতো। সে স্বপ্ন পূরণ করবে বসুন্ধরার এই শিক্ষাঙ্গনটি। শিক্ষার্থীদের জন্য চার বিঘা জমিজুড়ে খেলার মাঠ তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষা ভবনের ভিতরেও পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখা রয়েছে। প্রায় ১ হাজার বর্গফুটের আধুনিক পাঠদানকক্ষ থাকছে ৬৫টি।  

বিশেষায়িত শ্রেণিকক্ষ, কমন ক্লাস রুমও থাকছে। কনফারেন্স রুম, কমন রুম, আধুনিক ল্যাব, এক্সিবিশন হল, ক্যাফেটেরিয়া ছাড়াও থাকছে সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুটের একটি লাইব্রেরি। প্রযুক্তি জ্ঞান ও হাতেকলমে আধুনিক পাঠদানের জন্য লাইব্রেরি ও ল্যাবরুমে থাকবে সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সুযোগ-সুবিধা। সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুটের একটি বড় ক্যাফেটেরিয়া ও শিক্ষকদের জন্য ১২টি টিচার্স রুম রয়েছে। ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার প্রতিটিতে ৪০ হাজার বর্গফুট এবং চতুর্থ থেকে সপ্তম তলার প্রতিটিতে ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা রয়েছে।  

সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ ভবনটি। সুপরিসর স্কুল ও কলেজে একসঙ্গে ৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী শিক্ষাকার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা ভবনের উত্তর দিকে বিশাল পার্কিং এরিয়া থাকছে। এ মহৎ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন রাউজক উত্তরা মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম, এনডিসি, পিএসসি (অব.)।  

তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও আশপাশে যারা থাকেন তাদের মধ্যে এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা ছিল। এটি বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে। ’ 

প্রস্তাবিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরুতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং পরবর্তীতে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। কো-এডুকেশনে মেয়েদের জন্য আলাদা সেকশন থাকবে। আগামী শিক্ষাবর্ষেই কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে সব ধরনের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।  

পাঠদানের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পাশে গড়ে ওঠায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়াবিদদের সংস্পর্শে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবেন। ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের খেলার মাঠ, সুইমিং পুল ও শরীরচর্চার সুযোগ রয়েছে এখানে।  

এ বিষয়ে কাজী শওকত আলম বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয় চান, শিক্ষার পাশাপাশি যেহেতু এখানে খেলাধুলার সব ধরনের সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীরা যেন তার পুরো সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন। ’
 
প্রস্তাবিত নাম:
বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ

►বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে ১০ বিঘা জমির ওপর নান্দনিক ক্যাম্পাস। এ ছাড়াও কেরানীগঞ্জের রিভারভিউ প্রকল্পে আলাদা স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে

►সাত তলা মূল ভবনের প্রতি তলা প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। ভবনের ভিতরে মোট জায়গা প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুট।

►পুরো ভবনে রয়েছে পাঁচটি সুপরিসর সিঁড়ি ও চারটি লিফট। প্রায় ১ হাজার বর্গফুট আয়তনের মোট ৬৫টি শ্রেণিকক্ষ। রয়েছে আরও দুটি বিশেষায়িত শ্রেণিকক্ষ ও ছয়টি কমন ক্লাসরুম। ২৮০টি ওয়াশরুম থাকছে। ভবনের উত্তর অংশে রয়েছে সুবিস্তৃত পার্কিং সুবিধা।

 ►থাকছে সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুটের একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। সঙ্গে ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের তিনটি আধুনিক গবেষণাগার

►সাড়ে ৮ হাজার বর্গফুটের মাল্টিপারপাস হলরুম। রয়েছে সুপরিসর এক্সিবিশন হল, কনফারেন্স রুম, সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুটের একটি বড় ক্যাফেটেরিয়া ও শিক্ষকদের জন্য ১২টি টিচার্স রুম

►চার বিঘা জায়গাজুড়ে নিজস্ব খেলার মাঠ

►২০২০ সালের ৭ আগস্ট শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

 

 

মো. আমান উল্লাহ, উপদেষ্টা, বসুন্ধরা গ্রুপ

“বসুন্ধরা গ্রুপ এবার বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। শিক্ষা ভবনটি প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুট এরিয়া নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। এখানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে অ্যাসেম্বলির সুবিধা আছে। বৃষ্টি থাকলেও শিক্ষার্থীরা অ্যাসেম্বলি করতে  পারবেন। প্রতিষ্ঠানটিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভালোমানের শিক্ষক থাকবেন। স্কুলের সঙ্গেই বিশাল খেলার মাঠ রয়েছে। প্রয়োজন হলে শিক্ষার্থীরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের অন্য মাঠগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। জিম ও সুইমিং পুল সুবিধাও শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারবেন। আমি আশাবাদী, এটি বিশ্বমানের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে। ”

 

 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম, এনডিসি, পিএসসি (অব.)
সাবেক অধ্যক্ষ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।  সমন্বয়ক, বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (প্রস্তাবিত)

“বসুন্ধরা শিল্পগোষ্ঠীর আদর্শই হলো দেশ ও মানুষের কল্যাণ। দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য যদি কিছু করতেই হয় তবে সবার আগে আসে শিক্ষা। সুশিক্ষার মাধ্যমেই এ দেশের মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। শুধু মুখস্থবিদ্যা নয়, শিক্ষার্থীরা কীভাবে হাতেকলমে পাঠগ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।  এ ক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপ পরিচালিত স্কুল ও কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রত্যেকে যেন সুশিক্ষিত, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে সেভাবেই পরিচর্যার চেষ্টা থাকবে। ”

 

 

স্থাপত্য নকশায় অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, প্রিন্সিপাল, ভলিয়মজিরো লিমিটেড

“বসুন্ধরা এখন আকর্ষণীয় আবাসিক এলাকা। এক মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সেখানে রয়েছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদন কেন্দ্রসহ আধুনিক শহরের নানা আয়োজন। এই মহাপরিকল্পনার মূল কেন্দ্রে রাখা হয়েছে সুপরিসর, নান্দনিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুলটির নকশা করার সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবেশের নিবিড় সম্পর্কের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। উত্তর-দক্ষিণমুখী স্কুল ভবনটির আনুভূমিক তলগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন তা সবুজ পরিবেশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়। স্কুলে ঢুকতেই রয়েছে উন্মুক্ত ত্রিমাত্রিক ঘোরানো সিঁড়ি, ওপরে আকাশ দেখা যায়। রয়েছে বড় বারান্দা, করিডর, চারপাশের খোলা মাঠের সতেজ আবহাওয়া। এসব একজন শিক্ষার্থীর মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে একটি শিক্ষালয় গড়ে ওঠে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও স্থাপনা নিয়ে। এ স্থাপনার গুরুত্ব অনেক। একজন শিক্ষার্থী তার শৈশব-কৈশোর পার করে স্কুল ও কলেজে।  স্কুলের শ্রেণিকক্ষ, স্যানিটেশন, খোলামেলা পরিবেশ, নির্মাণশৈলী সব কিছুই তার মনে দাগ কাটে। স্কুলের পরিবেশ একজন শিক্ষার্থীর মনোদৈহিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। বসুন্ধরার এই স্কুলে যারা পড়তে আসবে তারা সহজেই প্রকৃতি, খেলাধুলা, বিনোদন ও আধুনিক আবাসনের অন্য সব আয়োজনের মধ্যে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে পরিবেশে অন্য সবার চেয়ে এখানেই বসুন্ধরার স্কুলটি অনন্য। প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক, স্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় বসুন্ধরার উপহার নান্দনিক এই শিক্ষাঙ্গন। ”

 

ছবিতে ক্যাম্পাস

১. সাত তলা ভবনটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে।

২. প্রকৌশলীর চোখে ভবনের উত্তর দিকের একটি লবি। ৩. ভবনের ভিতরে থাকছে নিজস্ব ক্যাফেটেরিয়া

৪. পাখির চোখে পুরো ভবনটি দেখতে যেমন লাগবে।

 

স্বপ্নের ভুবনে আরেক স্বপ্ন

ইমদাদুল হক মিলন

একটা সময়ে ঢাকা শহরের বনেদি এলাকা বলতে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী- এই এলাকাগুলোকে মনে করা হতো। গত কুড়ি পঁচিশ বছরে মানুষের সেই ধারণা বদলে গেছে। এখন বনেদি আবাসিক এলাকা বলতে বসুন্ধরাকেই মনে করে সবাই। এত আধুনিক ও সুপরিকল্পিত আবাসিক এলাকা ঢাকায় আর নেই। যত দিন যাচ্ছে বসুন্ধরা রুচিশীল নাগরিকের বসবাসের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এ রকম পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রশস্ত সুন্দর রাস্তা, সবুজে সবুজে ছেয়ে থাকা সুন্দর আবাসিক এলাকা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর বড় শহরের পাশগুলোতে যে নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ ও নিরাপদ ছোট ছোট শহর থাকে ঠিক ওরকম শহরের সঙ্গে তুলনীয়। কী নেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়? দেশের শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশ কয়েকটি বসুন্ধরায়। শ্রেষ্ঠ স্কুলগুলো এই এলাকায়। হাসপাতাল, শপিং মল, জিম, খেলার মাঠ সব কিছু মিলিয়ে বসুন্ধরার তুলনা বসুন্ধরা। অসাধারণ নির্মাণশৈলীর বিশাল আকৃতির কয়েকটি মসজিদ আছে, মাদরাসা ও এতিমখানা আছে। ‘বসুন্ধরা আই হসপিটাল’ নামের একটি অত্যন্ত উন্নতমানের চক্ষু হাসপাতাল আছে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ‘বসুন্ধরা ডায়াবেটিস হাসপাতাল’ আছে। চমৎকার কয়েকটি ফুডকোর্ট আছে। সব মিলিয়ে একটি আধুনিক আবাসন এলাকার জন্য যা যা প্রয়োজন তার কোনোটিই বাদ নেই এখানে। নিরাপত্তাব্যবস্থাটি অসামান্য।  রাত ৩টায়ও একটি মেয়ে চাইলে একা একা ঘুরে বেড়াতে পারবে বসুন্ধরায়। কেউ তার দিকে চোখ তুলে তাকানোরও সাহস পাবে না। স্থাপনাশৈলীতে অনন্য এমন সব আবাসিক ভবন নির্মিত হয়েছে যে, একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না।

খেলাধুলায় বসুন্ধরা পরিবারের প্রত্যেকেই অত্যন্ত উৎসাহী। ‘শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র’ ও ‘শেখ জামাল ফুটবল ক্লাব’ এই গ্রুপ পরিচালনা করে। তাদের নিজস্ব টিম ‘বসুন্ধরা কিংস’ এরই মধ্যে ক্রীড়ামোদী মানুষের ব্যাপকভাবে নজর কেড়েছে। এই গ্রুপের মিডিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মিডিয়া হাউস হিসেবে পরিচিত। তিনটি দৈনিক পত্রিকা-‘কালের কণ্ঠ’, ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এবং ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি সান’। একটি নিউজপোর্টাল ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম’। একটি রেডিও ‘রেডিও ক্যাপিটাল’। আর দুটো টেলিভিশন ‘নিউজ টোয়েন্টিফোর’ ও ‘টি-স্পোর্টস’। স্পোর্টস চ্যানেল হিসেবে ‘টি-স্পোর্টস’ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যানেল। আর দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ জনপ্রিয়তার দিক থেকে সবার ওপরে অবস্থান করছে।

বসুন্ধরা গ্রুপের স্লোগান ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’। দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে জিডিপিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে তারা। দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। দেশের কল্যাণ মানেই মানুষের কল্যাণ। মানুষ শক্তিশালী হলে দেশ শক্তিশালী হয়। মানুষ বড় হলে দেশ বড় হয়।

বসুন্ধরা গ্রুপের দুটো প্রতিষ্ঠান জনহিতকর কাজ করে চলেছে ব্যাপকভাবে। ‘বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন’ ও ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’। ‘বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন’ অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে আসছে কুড়ি বছর ধরে। এই ঋণের মধ্য দিয়ে বাঞ্ছারামপুর এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। কোটি কোটি টাকা এ খাতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রম চলতেই থাকবে। একটা সময়ে সারা দেশের অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য এই ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প অগ্রসর হবে।

‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন। ‘শুভ কাজে সবার পাশে’ সেøাগান নিয়ে সংগঠনটি এগোচ্ছে। অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে খোলা হয়েছে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে যে নারীরা প্রশিক্ষিত হচ্ছেন, প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের প্রত্যেককে একটি করে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হচ্ছে। এই সেলাই মেশিন ব্যবহার করে যাতে তাঁরা সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারেন, এটাই উদ্দেশ্য। দিনে দিনে কার্যক্রমটি বিস্তৃত হচ্ছে। সঙ্গে চলছে যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুল নেই সেসব অঞ্চলে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল’ প্রতিষ্ঠার কাজ। প্রতি মাসে একটি করে স্কুল তৈরি করা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় নিজস্ব জমিতে নিজস্ব ভবনে স্কুল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও পাঠাগার নির্মাণ করার কাজ এগিয়ে চলেছে। এ ছাড়া নানা রকমভাবে অসচ্ছল মানুষকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এই সংগঠন থেকে। প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার কিনে দেওয়া হচ্ছে, দোকান করে দেওয়া হচ্ছে, ভ্যানগাড়ি কিনে দেওয়া হচ্ছে কাউকে, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল কিনে দেওয়া হচ্ছে। মাথা গোঁজার ব্যবস্থা নেই এরকম বহু মানুষকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অসচ্ছল ও অসহায় মানুষের পাশে ব্যাপকভাবে দাঁড়ানোর কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’।

অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার দায়িত্বও নিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না-এমন শত শত নারী, পুরুষ ও শিশুর দায়িত্ব নিচ্ছে গ্রুপটি। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে এসব রোগীর পেছনে। আর আছে শিক্ষাবৃত্তি। যেসব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী টাকার অভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না, সারা দেশ খুঁজে খুঁজে এ রকম প্রায় ৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে মাসিক বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। ১ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত এই বৃত্তি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সবাই। কেউ কেউ ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। ভর্তি থেকে শুরু করে তাদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’। অসচ্ছল ও অসহায় নারী-পুরুষের ভরণপোষণেরও দায়িত্ব নিচ্ছে। মাসে মাসে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এ ধরনের মানুষকে। জেলায় জেলায় পাঠাগার তৈরি করা হচ্ছে ছেলেমেয়েদের পাঠাভ্যাস তৈরি করার জন্য। অর্থাৎ যত রকমভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করা যায় সবই করে যাচ্ছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি অসাধারণ এক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের আবাসিক এলাকায়। বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ‘বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স’। অত্যন্ত আধুনিক মানের ফুটবল ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরি করা হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে গেলে এই কর্মযজ্ঞ চোখে পড়বে প্রত্যেক মানুষের। যাঁরাই সেখানে যাবেন তাঁরাই বিস্মিত হবেন। এই স্টেডিয়ামের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো মানে একটি বিস্ময়কর স্বপ্নের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো। স্বপ্নের বাস্তবতা তাঁদের মুগ্ধ করবে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মাননীয় আহমেদ আকবর সোবহান মাত্র ৩৫ বছর আগে একটি স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই স্বপ্ন বিশাল বিস্তৃতি লাভ করেছে। স্বপ্ন অনেকেই দেখেন, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেন না সবাই। জনাব আহমেদ আকবর সোবহান স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন তো করেছেনই, স্বপ্নকে কোটি গুণ ছাড়িয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে তিনি আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চলেছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকের স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পাশেই নির্মাণ করছেন একটি স্কুল ভবন। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর সাত তলা ভবন। প্রতি তলায় ৪০ হাজার বর্গফুট করে জায়গা। স্কুলটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের বাংলা মাধ্যমের স্কুল। তবে ইংলিশ ভার্সনও থাকবে। বাংলাদেশে যে কটি বিখ্যাত বা স্বনামধন্য স্কুল আছে বসুন্ধরার এই স্কুলটি সেই পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে তো বটেই, ওই সব স্কুলকে ছাড়িয়ে আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। ঘুরে ঘুরে দেখে আমি চমৎকৃত হয়েছি। হাজার বারো শ স্কয়ার ফুটের একেকটি ক্লাসরুম। রুমগুলোর পরিকল্পনা ও ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারটি চমৎকার।  স্কুলের সঙ্গে একটি মাঠ। পাশেই আরেকটি স্টেডিয়াম। স্কুল ভবনের ভিতর ৫ হাজার স্কয়ার ফুট জায়গা নিয়ে তৈরি করা হবে লাইব্রেরি। সব মিলিয়ে স্কুলটি হয়ে উঠবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটি স্বপ্নের স্কুল। স্কুল হিসেবেই যাত্রা শুরু করা হচ্ছে, তবে হয়ে যাবে কলেজও। সব মিলিয়ে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই স্কুলটি খুলে দেবে এক স্বপ্নের দুয়ার।

বসুন্ধরা গ্রুপ যা-ই করে তা-ই হয় আন্তর্জাতিক মানের। এই স্কুলও হবে সেই মানেরই। মানের ক্ষেত্রে বসুন্ধরা কখনো আপস করে না। অসামান্য সৌন্দর্য মহিমায় ও শক্ত হাতের পরিচালনায় এই স্কুল হবে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম স্কুল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।