ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৩ কি.মি. হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যায় অদম্য ফজলুল

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩
৩ কি.মি. হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যায় অদম্য ফজলুল অদম্য মো. ফজলুল হক

ময়মনসিংহ: প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ দুই হাতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যাতায়াত করেন মো. ফজলুল হক (১৭) নামে শারীরিক এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। এনিয়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিস্মিত।

 

জানা গেছে, জীবনযুদ্ধে অদম্য এই ফজলুল জেলা সদর উপজেলার দাপুনিয়ার ইছাইল নতুন বাজার ফরাজীবাড়ী এলাকার গাছ কাটা শ্রমিক মো. লাল মিয়ার ছেলে। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। তাদের মধ্যে বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাইয়ের মধ্যে চার নম্বর ভাইটি একটি হোটেলে শ্রমিকের কাজ করে। আর অন্যরা সবাই ছোট।  

পারিবারিক সূত্র জানায়, জন্ম থেকেই ফজলুলের পা দুইটি বাঁকা ও অবশ। ফলে দুই হাতে জুতা পড়ে হামাগুড়ি দিয়ে তাকে চলাফেরা করতে হয়। আর এভাবেই সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে জিপিএ-৪.৫০, জেএসসিতে জিপিএ-৩.৫৭ ও গত বছর এসএসসিতে জিপিএ-৩.৬১ পেয়ে পাস করে এখন জেলার হলি-চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের একাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় লেখাপড়া করছে। তার স্বপ্ন, সে একদিন সরকারি চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে।  

ফজলুলের বাবা মো. লাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, জন্ম থেকেই ফজলুলের দুইটি পা সামনের দিকে বাঁকা। তিন মাস বয়সে ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তারা জানান, ফজলুলের পা ভালো হবে না। ফলে অচল পা নিয়েই সে বেড়ে উঠেছে।  

লাল মিয়া আরও বলেন, শিশু বয়স থেকেই লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহী ফজলুল। এটা দেখে পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা থাকার পরও অনেক কষ্ট করে তাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করাই। এরপর থেকে সে টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছে। মাঝে মধ্যে পরিবার থেকেও আমরা যতটুকু পারি সহযোগিতা করি। এভাবেই লেখাপড়া করে সে গত বছর এইচএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এ অবস্থায় মাঝে মধ্যে সে অটোরিকশায় চড়ে কলেজে গেলেও আর্থিক অসুবিধার কারণে প্রায় সময়ই দুই হাতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, ফজলুল হক হাতের তালুতে জুতা লাগিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যাচ্ছে। এতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়লে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারও ছুটে চলছে কলেজের দিকে।

জানতে চাইলে ফজলুল হক বলেন, আমার পরিবার দরিদ্র। ছোট থেকেই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল, বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করার। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এখন মানবিক শাখায় লেখাপড়া করেছি। আমি চাই, একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরি করব।

ছেলের এমন অদম্য ইচ্ছে বিষয়ে অসহায় মা মোছা. ফাতেমা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণে দেশবাসী ও সরকারের সহযোগিতা চাই।  

এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর এই অদম্য বাসনায় বিস্ময় প্রকাশ করে হলি-চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অর্থনীতির সিনিয়র প্রভাষক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ফজুলল যে দূর থেকে কলেজে আসে, তা অনেক কষ্ট সাধ্যের বিষয়। তবে তার অদম্য ইচ্ছা আছে বলেই, সে এটি করতে পারছে। আমরা চাই সে এগিয়ে যাক তার স্বপ্ন পূরণের পথে।  

ফজলুল হকের বিষয়টি জানতে পেরে কলেজের সব ধরনের বেতন ও পরীক্ষার ফি মওকুফ করে দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাজমুল হোসাইন।  

তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত ফজলুল হকের খোঁজখবর রাখছি। সে ভালো লেখাপড়া করছে। আশা করছি এইচএসসি পাস করলে সে প্রতিবন্ধী কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। এজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে ফজলুল ও তার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে আমরা চেষ্টা করব।  

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোস্তাফিজার রহমানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।