ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবি ক্যাম্পাসে অবৈধ দোকান, যানজট-বহিরাগতের ঢল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
ঢাবি ক্যাম্পাসে অবৈধ দোকান, যানজট-বহিরাগতের ঢল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাফিস ইকবাল। বইমেলা থেকে বের হয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে রোকেয়া হল পর্যন্ত আসতেই তার লেগে গেছে পনেরো মিনিট।

রাস্তার তীব্র জ্যাম, অতিরিক্ত মানুষের চলাচল, অবৈধ ভাসমান দোকান ঠেলে এতটুকু পার হাতেই নাভিশ্বাস তার।

তিনি বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিবেশে শিক্ষার্থীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। গতকালও যখন বহিরাগত মুক্ত রাখা গেল, আজ সে নিরাপত্তা কোথায়। শিক্ষার্থীরা ভয়ে বের হতে পারছে না। ’

শুধু নাফিসই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের ভিড়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।  

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নগরবাসীর ঢল নেমেছে। মানুষ, যানবাহন, ভাসমানের দোকানের ফাঁকে হাঁটার জায়গা নেই। দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন থেকে অনবরত প্রকট শব্দে হর্ন বাজানো হচ্ছে। রাস্তার দুপাশে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখা হয়েছে।  

এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বর ও পয়েন্টে তিনশর অধিক অবৈধ ভাসমান দোকান লক্ষ্য করা গেছে। ভিসি চত্বর, টিএসসির সড়কদ্বীপ, হাকিম চত্বর, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বর, শামসুন্নাহার হল প্রাঙ্গণ, কার্জন হল, দোয়েল চত্বর, বইমেলা গেটসহ বিভিন্ন স্থানে এই দোকানগুলো বসেছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে মুখরোচক খাবার, মেয়েদের প্রসাধনী, ফুলসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে দোকান বসেছে। মেয়েদের হাতের চুড়ি, গলার হার, কাঁচের পাথরের মালা, শিশুদের লাল-নীল বাতিযুক্ত খেলনা, পুতুল, ক্যারামবোর্ড, বেলুন, ফুলের দোকান, ডাব, আইসক্রিম, চিকেন মমো, দুধের মাঠা, ঝালমুড়ির দোকান রয়েছে। এছাড়া, হাওয়াই মিঠাই, পপকর্ন, পাপড় ভাজা, বুট-বাদাম, চা-কফি, সিগারেট ও পানের দোকান রয়েছে।  

টিএসসি গেটের পাশেই পেয়ারার দোকান নিয়ে বসেছেন একজন। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ডিমচপ, চিংড়িভাজিসহ নানা ধরনের ভাজা পোড়ার দোকান নিয়ে বসেছেন আরেকজন।  

এছাড়া, ফুচকা, চানাচুর ভাজা, বিভিন্ন ধরনের টক ফলের ভর্তা, স্ট্রবেরির দোকান, ভুট্টা পোড়ার দোকানও রয়েছে হাকিম চত্বর, সড়ক দ্বীপসহ নানা এরিয়ায়। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পানীয় দ্রব্যের খোল দোকানও।  

অবৈধ এসব দোকান, অনিয়ন্ত্রিত যান-চলাচল, পার্কিংয়ে অনিয়মসহ নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এছাড়া, খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট, ময়লা-আবর্জনায় পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

তবে অনিয়ম চললেও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টরিয়াল টিমের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। কোনো নিষেধাজ্ঞা না পেয়ে অবাধে দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

ডাব নিয়ে টিএসসিতে বসেছেন গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি এভাবে খোলা থাকবে তা জানতাম না। খোলা ছিল বলেই বসিয়েছি। দেখলাম অন্যরাও বসছে। তাই আমি এসেছি।  

সড়কদ্বীপের পাশে ভ্যানে করে আচার বিক্রি করতে দেখা যায় সোহেল নামে একজনকে। তিনি বলেন, আজকে বাইরের অনেকে এসেছেন বলেই এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু বলা হয়।  

একইকথা বলছেন আইসক্রিম বিক্রেতা মিজান। তিনি বলেন, আমি একটু দূরে বসেছি। প্রথমে প্রক্টরিয়াল টিম এসে নিষেধ করেছে। পেটের দায়ে বসেছি।  

বাদাম-বুট নিয়ে বসেছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, আজকে প্রক্টরিয়াল টিম কিছু বলেনি।  

প্রক্টরিয়াল টিমের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, চারিদিকে এমন পরিস্থিতি, বিশৃঙ্খলা, ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বলার আর সুযোগ নেই।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী তপু রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর কারা বহিরাগত এটা বুঝতে পারা দায় হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চারদিকে ভ্রাম্যমাণ খাওয়ারের দোকান এবং আগত দর্শনার্থীদের খাওয়া শেষে ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলে পুরো এরিয়া নোংরা করে রেখেছে। যানবাহনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রাস্তা পারাপারের সময় ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। ’

প্রক্টরিয়াল টিমের পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান।  

তিনি বলেন, যেহেতু শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের পুরো কার্যক্রম আমাদের উপর ছিল, তাই আজ অবৈধ দোকানগুলোকে বাধা দিতে পারিনি। আমাদের নিরাপত্তা বক্সগুলো রয়েছে। তবে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।  

তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমরা তাদের বসতে দিই না। যেমন পহেলা বৈশাখসহ অন্যান্য দিবসেও নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয়। আজ যারা বসেছে কালকের মধ্যে সবাইকে তুলে দেওয়া হবে। বইমেলার কারণে লোকসমাগম ঠেকানোর সুযোগ আমাদের নেই। ’

তিনি বলেন, টিএসসি দিয়ে যে গেটটি রয়েছে তা বন্ধ করা গেলে আমাদের অনেক উপকার হতো। কিন্তু এটিও আমাদের হাতে নেই। ডিএমপি হয়ত এ বিষয়ে ইনফ্লুয়েন্স করতে পারে। আমরা তাদেরকে চিঠি দিয়েছি। আমি নিজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। বাকিটা দেখা যাক।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
এসএসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।