ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

অবন্তিকার আত্মহত্যা নিয়ে অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মানের স্ট্যাটাস 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪
অবন্তিকার আত্মহত্যা নিয়ে অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মানের স্ট্যাটাস 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। আত্মহত্যার চেষ্টার আগে ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য সহকারী প্রক্টর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী নামে একজনকে দায়ী করেন।

 

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদরের নিজ বাসায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। পরে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

অবন্তিকার মৃত্যুর প্রায় সোয়া চার ঘণ্টা পর ঘটনার নেপথ্যের নানা দিক তুলে ধরে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী।

স্ট্যাটাসে তার দেওয়া বিবরণ তুলো ধরা হলো-

প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। এবারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সবার কাছে অনুরোধ করবো পুরো ব্যাপারটা একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শুধু জাজ না করে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার জন্য।

ঘটনার সূত্রপাত ০৪.০৮.২০২২ সালে। একটা ফেক আইডি থেকে আমাদের ১৪ জন শিক্ষার্থীর নামে গুজব ছড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছে পাঠানো হয়। যেখানে আমার নামেও অনেক মিথ্যা অপবাদমূলক কথা ছিল। এমনকি অবন্তীর নিজের নামও সেই টেক্সের মধ্যে ছিল।

যখন এমন মেসেজ সামনে আসলো আমি সবাইকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় যাই। সেখানে অবন্তী নিজেও উপস্থিত ছিল। পরবর্তী জিডি করা হয়। জিডি করে ফেরার সময় অবন্তী স্বীকার করে যে ওই ফেক আইডিটা সে নিজে খুলেছে। অন্য একটি মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য সে এ কাজটি করেছে।  

পরদিন এসআই রুবেলকে, আইও (কোতোয়ালি থানা) আমরা জানাই যে আমাদেরই এক ফ্রেন্ড ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এসআই রুবেল আমাদের থেকে অবন্তীর আম্মুর ফোন নাম্বার নিয়ে কল করেন। কল ধরেন অবন্তীর বাবা। সেখানে এসআই রুবেল ভাই আঙ্কেলকে বলেন আপনার মেয়ের বন্ধুদের মধ্যেই যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে সেহেতু নিজেরা বসে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেন।  

আমরা সবাই যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছেও আমরা ব্যাপারটা অবহিত করি যাতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে যেন প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত থাকেন।

অবন্তী এ ঘটনার আগ পর্যন্ত আমার বা আমাদের বেশ ভালো বন্ধুই ছিল। যাই হোক, প্রক্টর অফিস থেকে ওর পরিবারের কাছে চিঠি যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তীর বাবা মা ক্যাম্পাসে আসেন। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সামনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে অবন্তী এবং একটা মুচলেকা দেয়। সেই দিনই অবন্তীর আম্মা আমাদের সবার সঙ্গে বাইরে এসে কথা বলেন এবং বলেন ভালোভাবে বাকি সময়টা যেন আমরা মিলেমিশে পার করি। উনি ওইদিন আমাদের সবাইকে কেকও কিনে খাওয়ান।

তার পরবর্তী সময়ে আমি অবন্তীকার সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। আর ফেসবুকে তার সঙ্গে আমার তারপর থেকে কোনো যোগাযোগই হয়নি। এমনকি তার সঙ্গে আমার ওই ঘটনার পরে কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়নি।  

এবার আসি আমার জায়গা উপস্থাপনে। যারা পোস্টটি পড়ে এক তরফা চিন্তা করছেন তারা একটু ঠান্ডা মাথায় এটা পড়বেন। একজন মারা গেছে তার জন্য দুঃখ পাওয়াটা অবশ্যই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। আমি নিজেও ব্যথিত এবং মানতে কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা তুচ্ছ ঘটনাকে মাথায় রেখে ২ বছর পরে এসে এমন একটি কাজ অবন্তী করবে।

তবে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন। আমার কাছে প্রত্যেকটা বিষয়েরই ডকুমেন্টস আছে। সবাই যদি ডকুমেন্টসগুলোও স্পষ্ট করে দেখেন তাহলে হয়ত বুঝতে পারবেন। আর একটি প্রশ্ন কি আপনাদের মাথায় আসছে না যে " মেয়েটিকে যদি আমি অনলাইনে কোনোভাবে ডিস্টার্ব করতাম তবে সে সেটার স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে পারতো। সে সেটা কেন দিল না? "

আসলে ওই ঘটনার পরে ওর সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয়নি। না ফেসবুকে না অন্য কোনো মাধ্যমে। ওই ঘটনাতে সে আমার নামে যেসব বাজে কথা বলেছিল তারপরে আর তার সঙ্গে কথা কোনো কথাই বলতাম না। তাকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করার মতো মানসিকতা আমার কখনোই ছিল না। এই ছিলো পুরো ঘটনা। সে আমাকে ব্লক করে রেখেছিলো। তার সঙ্গে আমি আজকে পর্যন্তও ফেসবুকে বা অন্যকোনো মাধ্যমে কথাই বলিনি। এ ছিল আমার সাইডের বাস্তবতা এবং সত্যি বিষয়টি। আমি সবগুলো তথ্যই প্রমাণসহ তুলে ধরছি। বিশ্বাস করা না করাটা একান্তই আপনাদের উপর। তবে আমি যা বলেছি একদম সজ্ঞানে সত্যি বলেছি।

উপরন্তু বলে রাখা ভালো, এ ঘটনার কয়েক মাস পরে অবন্তিকার বাবা মারা যান। হতে পারে অবন্তিকা তার মনে ক্ষোভ বেঁধে রেখেছিল যে আমাদের কারণেই তার বাবা কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। হতে পারে এ ভাবনা থেকে অবন্তিকার মনে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তীব্র প্রতিশোধ প্রবণ চেতনা থেকেই হয়ত আজকের এ ঘটনা ঘটানো তার দ্বারা।

আরও বলা উচিত দ্বীন ইসলাম স্যারের সঙ্গে আমার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সালাম বিনিময় যোগ্য সম্পর্ক ততটুকুই ছিল। এর বাইরে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না যে স্যার আমার হয়ে অবন্তীকে কয়েকটা কটু বাক্যও বলতে পারে। স্যারকে আমি ডিফেন্ড করছি ব্যাপারটা এমন না, তবে স্যারকে ক্যাম্পাসের সবাই বেশ সহজ সরল মানুষ হিসেবেই চেনেন।  

পাবলিক সেন্টিমেন্ট অনেক বড় বিষয়। তাই একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয়টা চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবো সবাইকে।

অবন্তীকার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আমি এবং সবসময় তা করবো ইনশাআল্লাহ। তবে সবাই আমার দিকটাও ভাববেন। ভাববেন আমি ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না রেখেও অযথা একটা ভুল বোঝাবুঝির শিকার হচ্ছি। আমি আজ পর্যন্তও ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করিনি কোনো মাধ্যমেই। আমি নিজেই মাথায় সার্বিক পরিস্থিতির চাপ মাথায় নিয়েই পুরোটা লিখলাম। রায়হান সিদ্দিকী আম্মান, আইন বিভাগ, জবি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।