ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

শিক্ষা

ছাত্রী মেসে স্থানীয়দের সঙ্গে ইবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৭

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৪
ছাত্রী মেসে স্থানীয়দের সঙ্গে ইবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৭

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি): বিদ্যুৎ বিল চাওয়া নিয়ে একটি ছাত্রী মেসে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হন ৭ জন।

সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়ার পদমদী একালার নূর জাহান মহিলা হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়ার পদমদী এলাকার নুরজাহান মহিলা হোস্টেলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত ফারিয়া। ওই ছাত্রীর গত ৪ মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বিল দিতে বলেন। সোমবার ফারিয়া বিল পরিশোধ করতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় তাকে মেস ছেড়ে যেতে বলেন ম্যানেজার। বিষয়টি ফারিয়া তার বন্ধু আবু হানিফ পিয়াসকে জানান।

পিয়াস মেসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে নিরাপত্তাকর্মী তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। পরে তিনি আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে মেসে গেলে বিবেক বিশ্বাসের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মাঝে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে সেখানে স্থানীয়রা এসে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এতে ইবির সমাজকল্যাণ বিভাগের সাকিব আলি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আবু হানিফ পিয়াস, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিনিউকেশন টেকনোলজি বিভাগের নাইম রেজা ও ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির, স্থানীয় আশিক ও সাংবাদিকসহ ৭ জন আহত হন।

এ বিষয়ে মেফতাহুল জান্নাত ফারিয়া বলেন, আমি গতকাল সন্ধ্যায় ম্যানেজারকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে তিনি আমাকে বাজে ইঙ্গিত দেন। টাকা নেওয়ার সময় ম্যানেজার আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। পরে আমি টাকাটা ছুড়ে দিলে তিনি আমার বাসার নাম্বার চান এবং বলেন, ‘বেয়াদব মেয়ে। তুমি আজকেই মেস ছেড়ে দিবা। ’ পরে আমি আমার বিভাগের বন্ধুকে (আবু হানিফ পিয়াস) বিষয়টি জানাই। সে বিষয়টি নিয়ে মেসের ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি ও নিরাপত্তাকর্মী বাজে আচরণ করে। পরে পিয়াস তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে আবারও ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে আসে। তিনি পিয়াসের জামার কলার ধরে বের করে দেন। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করবো।

মেস ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস জানান, গত জানুয়ারি মাসে ওই ছাত্রী মেসে ওঠে। এরপর সে এতদিন থেকেছে কিন্তু কোনো বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। তার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় এক হাজার টাকা। আমি কয়েকবার বিল চাইতে গেলে সে বিভিন্নরকম বাহানা দিতে থাকে। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, আমি তার সঙ্গে কোনো বাজে আচরণ করিনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর রেজাউল করিম খান বলেন, মেসের মধ্যে কোনো ঝামেলা হলে মেস ম্যানেজারকে জানাতে হতো। আর মেস ম্যানেজারের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে সেটা মেসের মালিককে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু ওই মেয়েটা সেটা না করে তার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়েছে, যেটা ঠিক হয়নি। স্থানীয়দের মারধর করা হলে তারা তো বসে থাকবে না। স্থানীয়দের সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হোক আমরা চাই না। যেসব শিক্ষার্থীরা ঝামেলা করেছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফারিয়ার বন্ধু আহত আবু হানিফ পিয়াস বলেন, আমাদের বান্ধবীর সাথে কিছুদিন ধরে মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করে আসছিল। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তাকে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছে বলে আমাদের জানায়। এছাড়াও মেসের অন্যান্য মেয়েদের সাথেও প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করে। আজকেও আমার বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতে যাই। তখন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিবেক আমার এক বন্ধুকে চড় মারে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়। এতে আমরা চার বন্ধু আহত হই। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।

নাঈম রেজা বলেন, আমি রাতে খেতে বের হয়েছিলাম, তখন দেখি ওখানে বন্ধু-বান্ধবরা আছে। সেখানে গিয়ে দেখি বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে মেস ম্যানেজার বাজে আচরণ করেছে। পরে ওখানে হাতাহাতি হয়েছিল। এতে কয়েকজন ইনজুরি হয়।

এ বিষয়ে রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এস আই) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই আমরা এখানে এসেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে। তবে কেউ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি এখনো কোনো পক্ষেরই লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির কেউ উপস্থিত না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে কোনো সহকারী প্রক্টর থাকে না। আমি আমজাদকে বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য বলেছি। আমি নিজেও রাত ১১ টা পর্যন্ত মনিটরিং করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, যেম ১৪, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।