ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

উপদেষ্টা আসার পরও সমাধান হয়নি, অনশনে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৫
উপদেষ্টা আসার পরও সমাধান হয়নি, অনশনে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা কুয়েটে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন শিক্ষা উপদেষ্টা

খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কথা বলার পরও কোন সমাধান হয়নি।  
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ১০ টার দিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা অনশনরত ও অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

 

কীভাবে ছয় দফা থেকে উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবি পরিণত হলো, সেই বিষয়টি শিক্ষার্থীরা তাকে জানান।  
উপাচার্যের অপসারণ ছাড়া কোনোভাবেই অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না বলেও উপদেষ্টাকে জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে এসে গেছে। ছাত্রদের অনশন করতে হচ্ছে। তারা চাচ্ছে আমরা এখনই কোনো ঘোষণা দেই। যার মাধ্যমে তারা অনশন ভঙ্গ করতে পারে। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি আইনি কিছু বিষয় রয়েছে আমরা যাই করি না সেটা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট হতে হবে। আমার ধারণা আমি কিছুটা হলেও তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আমি এখানে একজন পিতা হিসেবে এসেছি আমি তাদেরকে বলেছি যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারা যেন পানি পান করে। আর যারা সুস্থ আছে তারা অনশন পালন করুক। কিন্তু তারা সেটা শুনেনি আমি তারপরও তাদেরকে অনুরোধ করছি তারা যেন অনশন ভাঙে আমি আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই সমস্যা সমাধান হবে।

কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানালে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এসেছি শুধুমাত্র ছাত্রদের অনশন ভাঙাতে, অন্য কারো সঙ্গে এখন কোনো কথা নয়’।  

শিক্ষার্থীদের জানান, কুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত কুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে ইতিমধ্যে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বৈশাখের তীব্র গরমে অনশনে আন্দোলনরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। অনেকের শরীরে রক্তচাপ কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। কুয়েটের আবাসিক হল ও বাইরের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে সামনে জড়ো হচ্ছেন।

সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার চত্বরে তারা এ অনশনে বসেন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রোকেয়া হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন ছাত্রীরা। এ সময় ছাত্র হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের তালা ভাঙতে সহায়তা করেন।

অপরদিকে কুয়েটের চলমান আন্দোলনের বিষয়টি বর্তমানে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ (২৩ এপ্রিল) ক্লাস বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। এ সময় বুয়েট, জবি, চুয়েট, কুয়েট, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।  

এ ছাড়া বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খুলনা নাগরিক সংগঠন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। মঙ্গলবার নিজেদের ফেসবুকে পেজে তারা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কুয়েটে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে বুধবার সকালে ছুটে আসছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। কুয়েট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধিদলের বুধবার বিকেলে কুয়েটে আসার কথা রয়েছে।
এদিকে বুধবার সকাল থেকে কুয়েটের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
অনশন থেকে প্রত্যাহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। মঙ্গলবার সারাদিন কয়েকবার কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান।  
উপ-উপাচার্য অনশনস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন।

এর আগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে এবং আবাসিক হলগুলো ২ মে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুই দিন ধরে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবারদুপুরে নিজেরাই একের পর এক হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৫
এমআরএম/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।