ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবির মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদের নির্বাচন দিচ্ছে না প্রশাসন

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৪
জাবির মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদের নির্বাচন দিচ্ছে না প্রশাসন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি, ডিন ও শিক্ষাপর্ষদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচন দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন পর্ষদ বর্তমান প্রশাসনের অনুকূলে থাকায় এই পর্ষদগুলোকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।



এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন পর্ষদের দ্রুত নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জোর দাবি জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। এছাড়া অনেক আগে থেকেই বামপন্থী শিক্ষকরা মেয়াদোত্তীর্ণ এই পর্ষদগুলোর নির্বাচন দাবি করে আসছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে জানা যায়, গত ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি অনুষদের ডীনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আড়াই মাসেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন দিচ্ছে না প্রশাসন। নির্বাচিত চারটি অনুষদের মধ্যে দুটি অনুষদে যথাক্রমে জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক আবুল খায়ের কোষাধ্যক্ষ এবং গাণিতিক ও পদার্থ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক আবুল হোসেন উপ-উপাচার্য হওয়ায় দুটি অনুষদ শূন্য হয়।

অনির্বাচিত ও প্রশাসনের অনুগত অধ্যাপক আবদুল জব্বার হাওলাদারকে জীব বিজ্ঞান অনুষদে এবং  অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে গাণিতিক ও পদার্থ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন হওয়া চারটি অনুষদের ডিনের মধ্যে তিন অনুষদের ডীন ও অনির্বাচিত আইন এবং বিজনেজ স্টাডিজ অনুষদের ডীন পদে বর্তমান প্রশাসনের পক্ষের শিক্ষকরা বহাল আছেন।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষাপর্ষদে মেয়াদ শেষ হয়েছে। সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত ৬টি পদের মধ্যে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। সহযোগী অধ্যাপক শুদ্ধসত্ত্ব রফিক ‘সহযোগী অধ্যাপক’ ক্যাটাগরি থেকে, সহকারী অধ্যাপক মো. তরিকুল ইসলাম ‘সহকারী অধ্যাপক’ ক্যাটাগরি থেকে এবং প্রভাষক মো. নূরুল হক ‘প্রভাষক’ ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত হন। তিনজনের পদোন্নতি হওয়ায় পদ তিনটি শূন্য রয়েছে। নির্বাচিত অপর তিনজন সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে দুইজন প্রশাসনের পক্ষের শিক্ষক এবং একজন বিএনপিপন্থী শিক্ষক।

এছাড়া গত বছরের ২৫ জুন সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে বর্তমান প্রশাসনের অনুগত শিক্ষকরা প্রতিনিধিত্ব করায় মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচন দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট সদস্যরা অনুকূলে থাকায় আগামীতে বিভিন্ন পষর্দের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের লক্ষে দলভারী করার জন্য প্রশাসন বর্তমান সিন্ডিকেট ব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। তিনটি বিভাগের বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগসহ ১টি বিভাগে বিজ্ঞাপিত ৪টি পদের বিপরীতে ৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। আরো একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  

এদিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে অতিদ্রুত মেয়াদ উত্তীর্ণ সিন্ডিকেট, সিনেট, শিক্ষাপর্ষদ ও ডীন নির্বাচনের জোর দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা।

স্মারকলিপিতে তারা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে অতিদ্রুত মেয়াদ উত্তীর্ণ সিন্ডিকেট, সিনেট, শিক্ষাপর্ষদ ও ডীন নির্বাচন সম্পন্ন করা আবশ্যক। বিগত দিনগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে একাধিকবার আপনাকে সবিনয় অনুরোধ করা সত্ত্বেও আপনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেননি। ’

বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ এর সদস্য সচিব ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিরোধী মতের হলেও উপাচার্যের জন্য ভাল। কারণ বিরোধী মতের প্রতিনিধিরা উপাচার্যের খারাপ কাজগুলোর সমালোচনা করবেন, প্রতিবাদ জানাবেন। উপাচার্যকে বিপদে ফেলার লোকের অভাব নাই। তাই বিরোধী মতকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ভালোভাবে চলবে। ’

বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষক মঞ্চ’র সমন্বয়ক দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন পর্যদের নির্বাচন আমরা অনেক আগে থেকেই দাবি করে আসছি। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন পষর্দের নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ হলে শীঘ্রই নির্বাচন দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।