খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীর প্রতি আস্থা হারিয়ে তার দ্রুত পদত্যাগ দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একইসঙ্গে তারা এমন একজন যোগ্য উপাচার্য নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যিনি কুয়েটের সমস্যার সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিধি-বিধান মেনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।
বুধবার (২১ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন এই দাবি জানান। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, যেহেতু তিনি দায়িত্ব নিতে পারছেন না, সেহেতু সম্মানের সাথে নিজ থেকেই বিষয়টি সমাধান করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে তার উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে পদত্যাগ করা।
শিক্ষক নেতারা জানান, তারা গত ৪ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা করে বর্তমান উপাচার্যকে সাত কর্মদিবস সময় দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়কে বিধি অনুযায়ী পরিচালনার জন্য। পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্ত, সিন্ডিকেট, ডিসিপ্লিনারি কমিটির বৈঠকসহ দ্রুত শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানানো হয়, যাতে ছাত্র-শিক্ষক সবাই দ্রুত ক্লাসে ফিরতে পারে।
তবে সাত কর্মদিবস পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। বরং তিনি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ১৮ মে শিক্ষক সমিতি আবার সাধারণ সভা করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয় এবং উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
তারা বলেন, সংকটময় এই মুহূর্তে উপাচার্য দাপ্তরিক কাজের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ফিরে আসেননি। ১৮ তারিখে তিনি বলেছিলেন, পরদিন ফিরবেন এবং সমাধানের উদ্যোগ নেবেন, কিন্তু আজ তৃতীয় দিন অতিবাহিত হলেও তিনি আসেননি। এমনকি তিনি কোনো অফিসিয়াল নোটিশও দেননি। যাকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনিও দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত এখন অভিভাবকশূন্য।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই ধরনের অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা একজন উপাচার্যের কাছ থেকে কাম্য নয়। আমরা তার প্রতি আস্থা ও সহযোগিতা দেখিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধানের প্রতি তার অনীহা, ছাত্র-শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি অবজ্ঞা এবং অভিভাবকের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে আমরা মনে করি, তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম। তাই আমরা তার দ্রুত পদত্যাগ দাবি করছি।
এই দাবিকে সামনে রেখে শিক্ষক সমিতি বৃহস্পতিবার (২২ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা তৎকালীন উপাচার্য, প্রো-ভিসি ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক (ডিএসডব্লিউ)-এর পদত্যাগ দাবি করেন। প্রায় আড়াই মাসব্যাপী চলা টানা আন্দোলন এবং শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণ করে।
২৫ এপ্রিল শুক্রবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
পরে ১ মে বৃহস্পতিবার কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি গত ২ মে রাতে কুয়েটে পৌঁছান এবং ৩ মে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যদিও গত ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতির কারণে ক্লাস শুরু হয়নি।
এসআরএম/এমজে