ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

জাবিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে আওয়ামীপন্থীদের আতাঁত

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪
জাবিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে আওয়ামীপন্থীদের আতাঁত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে আতাঁত করে পদ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ।

সম্প্রতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটুক্তিকারী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দলের শিক্ষকদের সঙ্গে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের আতাঁতের বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না ক্যাম্পাসের বাম ও আওয়ামীপন্থী অপর অংশের শিক্ষকরা।



তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থিতিশীল রাখার জন্য জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। আন্দোলন চলাকালীন একজোট হয়ে গত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদে তারা জয় লাভ করে।

পরবর্তীতে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগের পর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্রাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি পদের দায়িত্ব দেন। অপরদিকে দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হন আওয়ামীপন্থী কয়েকজন শিক্ষক।

তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নির্বাচন ২০১৫ এর ফল ঘোষণা করা হয়। এতে ১৫টি পদের মধ্যে নয়টি নেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ ও ৬টি পদ নেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা।

নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একটি পক্ষ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলেও সোমবার আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ তাদের প্যানেল প্রত্যাহার করে।

অপরদিকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অপর অংশের প্যানেল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সমাজ উভয়ই তাদের বেশ কিছু পদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে।

প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর শিক্ষক সমিতির ১৫টি পদের কোনোটিতেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিকেলে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার এ কে এম আবুল কালাম।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ প্যানেল থেকে সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. এস. এম. আবু দায়েন, নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, অধ্যাপক অসিত বরণ পাল, অধ্যাপক এস. এম. বদিয়ার রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক বশির আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ ও অধ্যাপক রাশেদা আখতার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন।

অপরদিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সমাজ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার ও যুগ্ম সম্পাদক মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন ও অধ্যাপক মো. শামছুল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন।

নির্বাচন কমিশনার এ কে এম আবুল কালাম বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ফল ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তিকারীর অনুসারীদের সঙ্গে তথাকথিত আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের আতাঁতের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ’

বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক মঞ্চ’র মুখপাত্র ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা যখন সমন্বিত প্যানেল দেয় তখন আর করার কিছু থাকে না। এ রকম একটি অশুভ জোট ক্যাম্পাসের জন্য ফ্যাসিস্ট শক্তি হয়ে উঠছে।  

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’র সাধারণ সম্পাদক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন, আওয়ামী-বিএনপি মিলিয়ে আমরা একটি আন্দোলন এক সঙ্গে করেছি। আমাদের সে চরিত্রটি এখনো আছে। গত শিক্ষক সমিতির নির্বাচন এক সঙ্গে করেছি। যারা নিন্দা জানাচ্ছে তারা তো শিক্ষক সমাজ নামে তাদের সঙ্গে একজোট হয়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন করেছে তখন কি অশুদ্ধ হয়নি?

তিনি বলেন, পূর্বে শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদ ভাগাভাগি করে নিতো। মাঝখানে কয়েক বছর হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি চাই। যেহেতু আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি তাই আমরা এখনো এক সঙ্গে আছি। গতবারে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ৬টি পদ আমরা ৯টি পদ নিয়েছিলাম। এবারো একই আছে।

শিক্ষক সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থিতিশীল রাখার জন্য আমরা এটা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।