এর আগে ‘এফ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় সোমবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৩ তম সিন্ডিকেট সভায় এই ইউনিটের ১০০ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
একইসঙ্গে মঙ্গলবার ভর্তি কমিটির সভায় ১৬ মার্চ সকাল ১০টায় নতুন করে এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এক মানববন্ধনে মিলিত হয় ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা।
পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টার অফিসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান এবং ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি নজির সৃষ্টি হয়েছে। এসময় তিনি আরো বলেন, তোমাদের মেধার সুবিবেচনা অবশ্যই করা হবে।
এর উত্তরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, স্যার আপনারা আমাদের ভর্তি বাতিল করে নজির সৃষ্টি করেছেন আর আমরা ১০০ শিক্ষার্থী জীবন দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নজির সৃষ্টি করে যাবো।
পরে তারা সেখান থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলিত হন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, ওই সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৮০ ভাগই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি বাতিল করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে যারা বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের এখন আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্য কোথাও অনার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই।
এছাড়া তাদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
তবে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে তাদের মেধা তালিকা ও নাম জানতে চাইলে তারা না জানিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের ভর্তি হওয়া ছাত্রী সামছুন্নাহার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাতিল করে এখানে এসে ভর্তি হয়েছি। এখন এই অনিশ্চয়তায় আমি কি করবো জানি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কোন শিক্ষার্থীই নিশ্চিত করে বলতে পারবে না একই ইউনিটে একই প্রতিযোগিতায় আবারো চান্স পাওয়া যাবে। ’
একই ভাবে সিদ্দিক নামের অপর এক শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও সেখানে ভর্তি না হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান।
আন্দোলনকারী এ সব শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু প্রশ্ন ফাঁসের সব তথ্যই পেয়েছেন তাহলে তারা কোন শিক্ষার্থীরা এর সঙ্গে জড়িত শুধু তাদের ভর্তিই বাতিল করুক। এভাবে আমাদের কেন এত বড় শাস্তি দেওয়া হবে। আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি।
এদিকে, সিন্ডিকেট সভায় ওই ইউনিটের যে সব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাদের ব্যাপারেও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘যে তিনজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তারা এমন কাজ করতে পারেন এটা আমাদের বিশ্বাস হয় না। ’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ আমরা এখনো সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের লিখিত কোনো তথ্য পাইনি। তবে উপাচার্যের সঙ্গে আজ আমরা আবার বসবো। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা হবে। এর পরে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। ’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘তারা আন্দোলন করতেই পারে। তবে আন্দোলনকারীরা যে প্রশ্ন পায়নি তার প্রমাণ তারা কীভাবে দেবে। আর প্রশ্ন ফাঁসের কারণে যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেনি তাদের কেন আমরা বঞ্চিত করবো। তাদের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ১৬ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে তারা মেধার পরিচয় দিক। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, ০৭ মার্চ, ২০১৭
আরএ