এরমধ্যে ২য় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষা, ৩য় বর্ষের পরীক্ষার তারিখ এবং ২য় বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা।
দুই ব্যাচের মাঝপথে ভর্তি থেমে থাকা ও ক্লাস শুরু না হওয়ায় যেমন বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা, তেমনি তিন ব্যাচের ফরম পূরণ করেও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা না হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
এই ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’র জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও অধ্যক্ষরা।
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তের সিদ্ধান্ত হয়।
কলেজগুলো অধিভুক্তের জন্য ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে এসব কলেজে স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স পর্যায়ে এক লাখ ৬৭ হাজার ২শ ৩৬ জন শিক্ষার্থী এবং একে হাজার ১শ ৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।
ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এখন থেকে এসব কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হবে। পাঠদান সূচিও নির্ধারণ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সিদ্ধান্তে বলা হয়, অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের সিলেবাস প্রণয়ন, ভর্তি কার্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ, সনদ দেওয়াসহ যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেবাসেও থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের একটি বড় অংশের প্রভাব।
কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কারিকুলাম, ভর্তি প্রক্রিয়া, নতুন ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে।
১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর অনার্স, মাস্টার্স ও ডিগ্রি কোর্সের কয়েকটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা-ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে।
ব্যবহারিক পরীক্ষা কে নেবে
২০১১-২০১২ সেশনের অনার্স চতুর্থ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেও ১৬ ফেব্রুয়ারির পর নতুন সিদ্ধান্ত আসায় এই ব্যাচের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা কে নেবে তার সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে আটকে রয়েছে প্রক্রিয়া। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেওয়ার কথা থাকলেও তা চূড়ান্ত হয়নি।
২০১৪-২০১৫ সেশনের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়ে গেছে, ফল বাকি রয়েছে। কবে ফল হবে এজন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা।
ফরম পূরণ করে ফলের অপেক্ষায় তিন ব্যাচ
১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২০১২-২০১৩ সেশনের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা কবে এবং কে নেবে- এর অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা।
২০১৩-২০১৪ সেশনের মাস্টার্স শেষ পর্বের ফরম পূরণ হয়েছে। পরীক্ষার তারিখ এখনও হয়নি। ২০১৫-২০১৬ সেশনের ডিগ্রি (পাস) কোর্সের ফরম পূরণ হলেও পরীক্ষার তারিখ আর ঘোষণা হয়নি।
মাঝপথে আটকা ভর্তি
জাতীয় বিশ্ববেদ্যালয়ের অধীনে থাকার মধ্যে ২০১৪-২০১৫ সেশনের মাস্টার্স শেষ পর্বের ভর্তির প্রথম মেধা তালিকা থেকে ভর্তির পর নতুন সিদ্ধান্ত না আসায় এখন পরবর্তী মেধা তালিকা থেকে আটকে রয়েছে ভর্তি।
একইভাবে ২০১৬-২০১৭ সেশনের ডিগ্রি (পাস) কোর্সের প্রথম মেধা তালিকা থেকে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু আর ভর্তি করাতে না পারায় আটকে রয়েছে ভর্তি ও ক্লাস।
সিদ্ধান্তে খুশি, ভোগান্তিতে ক্ষোভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা খুশি হয়েছেন। তবে ক্ষোভও বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কারণ, নতুন করে সিদ্ধান্ত না আসায় যেসব ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা ও ভর্তি আটকে রয়েছে তারা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ ইমাম হোসেন এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসনের ফলে সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা খুশি। কারণ, এতে শিক্ষার মান আরেক ধাপ উন্নীত হবে।
‘কিন্তু যেসব ব্যাচের ক্লাস, ভর্তি ও পরীক্ষা সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে সে বিষয়ে আমরা আশা করবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুতই পৃথক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেবে। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না ডাকলে সাতটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষরা নিজেরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সিদ্ধান্তের জন্য যাবেন বলে জানান মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএনএস