এ নিয়ে বর্তমান বিভাগীয় সভাপতি উদ্যোগ নিলেও সাবেক বিভাগীয় সভাপতির কারণে নতুন ভবনে ল্যাব স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের পাশে ছিল মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পুরানো বিল্ডিং। সম্প্রতি বিভাগটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পাশে নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়। নতুন ভবনে ক্লাস শুরু হলেও ল্যাব রুম স্থানান্তর করা হয়নি। যার কারণে আধ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ল্যাবে যেতে হচ্ছে। এই দূরত্বের কারণে তাদের পক্ষে নিয়মিত ল্যাব করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
এ নিয়ে বিভাগের বর্তমান সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক শামছুন নাহার উদ্যোগী হলেও বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার নতুন ভবনে ল্যাব স্থানান্তর না করার জন্য প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ তিনিসহ তিন শিক্ষক তিনটি ল্যাব রুমের মধ্যে তিনটিই রিসার্স করার জন্য নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। সাবেক সভাপতির মতে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ল্যাব করার দরকার নেই, গবেষণা করার প্রয়োজন।
তার এমন বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবভিত্তিক সাবজেক্ট, সেখানে কিভাবে একজন শিক্ষক এমন মন্তব্য করতে পারে তা বোধগম্য নয়।
জানা গেছে, এরই ওই শিক্ষক তিনটি ল্যাব রুমের মধ্যে দু’টি রুমে তালা ঝুঁলিয়ে দিয়েছেন এবং বিভাগের অন্য জায়গায় পানি খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় একটি রুম পানি খাওয়ার জন্য খুলে রেখেছেন।
এ নিয়ে বিভাগীয় সভাপতি মৌখিকভাবে ল্যাব রুমের চাবি চাইলে সাবেক সভাপতি চাবি দিতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে ল্যাব রুম খুলে দেওয়ার জন্য সভাপতির পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। সরেজমিনে দেখা যায়, ল্যাব রুমগুলোতে তালা ঝুঁলছে।
জানা যায়, ব্যবহারিকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ১০০ নম্বর, ২য়, ৩য়, ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০ নম্বর এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫০ নম্বর রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের থিওরি ক্লাস ভালোভাবে বুঝতে ও জানতে হলে ল্যাবের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ সমস্যার কারণে ওই বিভাগের ছয়টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারিক ক্লাস করতে পারছেন না।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাইক্রোবায়োলজির ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বাঁধন বাংলানিউজকে বলেন, এটা ভাবতেও খারাপ লাগে যে ল্যাব রুম থাকা সত্ত্বে তা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। ক্লাসে অনেক বিষয় বুঝতে অসুবিধা হয়। তখন তৎক্ষণাৎ ল্যাবের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এত দূরে গিয়ে ল্যাব করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। যার কারণে কোনো ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই আমাদের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে।
বিভাগীয় সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক শামছুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, যদি একজন শিক্ষার্থী ল্যাব না করে, সে কিভাবে উচ্চ শিক্ষা লাভ বা চাকরির বাজারে টিকে থাকতে পারবে। তাছাড়া পুরান ভবনে শিক্ষক বসার মতো কোনো জায়গা নেই। যা ছিল তা অন্য বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় এখান থেকে ওখানে গিয়ে ল্যাব করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিষয়টির সমাধান না হলে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হবে।
শামছুন নাহার বলেন, এটা ভাবতে অবাক লাগে যে, যারা শুধু মাস্টার্সে ৩.৫০ সিজিপিএ পাবে তারাই এখানে গবেষণা করার সুযোগ পাবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাহলে কী অপরাধ করলো?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, কিসের ল্যাব কাদের ল্যাব, এখন আমি গাড়ির ভেতরে আছি, এগুলো তো বুঝবো না। কিছুক্ষণ পরে আমার ক্লাস আছে তুমি পরে ফোন দাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, আলী আজম সাহেবকে বিভাগীয় সভাপতি এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন বিষয়টি জেনেছিলাম। পরে কী হয়েছে সে বিষয় বলতে পারবো না।
বর্তমান সভাপতিকে নতুন ভবনে ল্যাব স্থানান্তরে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
জিপি/এইচএ/