তবে বেশির ভাগ সময়ই অ্যাম্বুলেন্সগুলো অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কর্মকর্তারা। যার কারণে জরুরি অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ঘটছে মৃত্যুর মতো ঘটনাও।
মেডিকেল অফিস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিনের পুরানো তিনটি অ্যাম্বুলেন্স এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ সময় এগুলো অকেজো হয়ে থাকে। তাছাড়া একটি অ্যাম্বুলেন্সের যে বৈশিষ্ট থাকা প্রয়োজন তার কোনটিই অবশিষ্ট নেই। তার পরেও ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা দ্বিগুন-তিনগুন বাড়লেও নতুন করে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা হয়নি।
এদিকে ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিকেল কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মদ, হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবাসহ যতো প্রকার মাদকদ্রব্য আছে এমনকি কোনো কোনো সময় অস্ত্রও আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সনামধন্য শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের যতো আত্মীয় স্বজন আছে সবার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের এ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করছে। যা নিয়ম বর্হিভূত।
তবে তা যদি হয় রোগীর জন্য, তাহলে এক কথা থাকে। কিন্তু এমনো অনেক ঘটনা ঘটেছে যে চাচা শ^শুরের বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেছে বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যায় যোগ করেন ওই মেডিকেল কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাম্বুলেন্স চালক বাংলানিউজকে জানান, জরুরি রোগী নিয়ে ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের) যাচ্ছি। রোগীর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলো। আমাকে মেডিকেল থেকে জানানো হয়, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ তাকে পিজিতে নিতে হবে। আমি রোগীকে নিয়ে যখন হেমায়েতপুরে পৌঁছালে তখন আমাকে দাঁড়াতে বলা হয়। রোগী দেখি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনে তার বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছেন। পরে তারা শাহাবাগ গিয়ে ওখানকার তার বন্ধুদের ডেকে তাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে আমাকে পাটুরিয়া ঘাঁটে নিয়ে যেতে বলেন। আমি হতবাগ হয়ে গেলাম। যার জন্য এতো তাড়াহুড়া করে রেস্ট না নিয়ে এলাম..। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
কেউ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যায় ইলিশ মাছ খেতে। কেউ আবার বাজার করে ফেরে। এ ধরনের কাজ ক্ষমতসীন দলের লোকজন করে থাকে বলেও জানান তিনি ।
যার কারণে দেখায় যায় অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে জরুরি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যায়। ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসানী হলের এক শিক্ষার্থী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মেডিকেলে আসলে তাকে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন কর্মরত চিকিৎসক। কিন্তু সেই সময় মেডিকেলে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। অ্যাম্বুলেন্স দেরিতে আসায় মেডিকেল সেন্টার থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি মিটিং আছেন বলে জানান এবং বলেন এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
জিপি/এসএইচ