ফলে পাঠক, সদস্য আর লাইব্রেরিয়ান শূন্যতায় কোনোমতে টিকে আছে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম।
শহরের হলপাড়া থেকে সরকারপাড়ায় স্থানান্তর করে ২০১০ সালে লাইব্রেরিটির নিজস্ব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়।
সপ্তাহে দু’দিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বন্ধ থাকে গণগ্রন্থাগার। বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে লাইব্রেরিটিতে বিনোদন, ম্যাগাজিন, গল্প, উপন্যাস, ছোটদের বইসহ নানা ধরনের বইয়ের সংখ্যা কয়েক হাজার। ১০টি দৈনিক পত্রিকা, ২টি সাপ্তাহিক পত্রিকা, ১টি মাসিক পত্রিকা ও চাকরির পত্রিকা রাখা হয় এখানে।
অবকাঠামোগত ভালো সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে গণগ্রন্থাগারে। ১১৪টি চেয়ার ও ১৫টি টেবিল সম্বলিত পাঠকক্ষে নারী-শিশু পাঠকদের জন্য রয়েছে আলাদা বসার ব্যবস্থা ও অনুকূল পরিবেশ।
এরপরও দিন দিন পাঠক কমছে লাইব্রেরিটির। ৪০ সদস্যের পাঠক ফোরাম থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। কার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়িতে বই-পত্রিকা নিয়ে যেতে পারলেও সে সুযোগ নেন না বেশিরভাগ পাঠক ফোরাম সদস্যই।
স্থানীয়রা জানান, ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত হলপাড়ার নরেশ চৌহান সড়কে থাকার সময় লাইব্রেরিটিতে পাঠকের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন শহর থেকে একটু দূরে হওয়ায় এখানে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন পাঠকরা। এছাড়া কম্পিউটার থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় পাঠক কমছে।
গণগ্রন্থাগারটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৪টি পদ থাকলেও বর্তমানে আছেন ৩ জন। তার মধ্যে ১ জন সহকারী লাইব্রেরিয়ান, ১ জন জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান ও অন্যজন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। প্রধান পদ লাইব্রেরিয়ানই নেই দীর্ঘদিন ধরে।
শহরের কলেজ পাড়ার মামুন ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, এ লাইব্রেরিতে পুরনো বই ছাড়া পড়ার মতো নতুন বিজ্ঞান ভিত্তিক ও কোরআন-হাদিসের খুব বেশি বই নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় লাইব্রেরিমুখী হচ্ছেন না পাঠকরা।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আজগর আলী বলেন, ‘আমার বয়সী কিছু মানুষ লাইব্রেরিতে এখনও আসেন। তবে তরুণ-যুবক শ্রেণী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ইদানিং আসছেন না। এলেও সামান্য কয়েকজন’।
তার মতে, ‘বর্তমান তরুণ-যুবক প্রজন্ম বেশিরভাগ পাঠের কাজটি সেরে নিচ্ছেন স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আগে এই প্রজন্মই পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও অন্যান্য বই পড়তে লাইব্রেরিতে ভিড় করতেন। কিন্তু বর্তমানে বাড়িতে, স্কুলে, প্রাইভেটে, কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে এসব কাজ দ্রুত সেরে নিতে পারছেন। ফলে তাদেরকে আর লাইব্রেরিতে যেতেও হচ্ছে না’।
সালন্দর মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক সোহেল আলম বলেন, ‘প্রতিদিন এখানে পত্রিকা পড়তে আসি। কিন্তু বেশিরভাগ পত্রিকা অনেক দেরিতে আসে। ফলে অপেক্ষা করে থাকতে হয়’।
সহকারী লাইব্রেরিয়ান খালেক হোসেন জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পান ঠিকমতো। সরকারিভাবে প্রতি বছর ১ হাজার ২০০ থেকে বছর ১ হাজার ৩০০ বই পাওয়া যায়। এর মধ্যে গল্প, উপন্যাস, ম্যাগাজিন, নাটক ও ছোটদের বিভিন্ন বই থাকছে।
নানামুখী প্রচার-প্রচারণা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে লাইব্রেরিটি আবারও পাঠকে পরিপূর্ণ হবে বলেও দাবি তার।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
এএসআর