ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

যশোর এমএম কলেজে ভর্তিতে অতিরিক্ত দেড় কোটি টাকা আদায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৮
যশোর এমএম কলেজে ভর্তিতে অতিরিক্ত দেড় কোটি টাকা আদায় যশোর সরকারি এমএম কলেজ প্রাঙ্গণ। ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: মাস্টার্সে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় (এমএম কলেজ) কর্তৃপক্ষ। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ভর্তি কার্যক্রমে শিক্ষার্থী প্রতি বিভিন্ন খাতে ৮শ’ ৩০ টাকা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দিলেও তা মানা হচ্ছে না সরকারি এমএম কলেজে।  

কলেজের নোর্টিশবোর্ডে ভর্তির জন্য চার হাজার ৫৩০ টাকার জমা দিতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে এক হাজার দুইশ’ টাকা বিভাগীয় খাত হিসেবে দেখানো হলেও বাকি তিন হাজার ৩৩০ টাকার কোন খাত দেখানো হয়নি।  

তবে কলেজটির একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা এই অতিরিক্ত টাকা কোথায় যায় বা কোন খাতে ব্যয় হয় তা আমরা জানি না। ’

এদিকে মাস্টার্সে ভর্তিতে খাত বহির্ভুত এমন মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায় করার কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকের পরিবার এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করছে। অনেকে আবার টাকা জোগাড় করতে না পেরে ভর্তি হতেই পারছেন না।  

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ১ এপ্রিল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি শুরু হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশিকায় ভর্তির জন্য ৮৩৫ টাকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি ৮শ’ টাকা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ফি ২০ টাকা, বিএনসিসি ফি ৫ টাকা এবং রোভার স্কাউট ফি বাবদ ১০ টাকা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা মানছে না যশোর সরকারি এমএম কলেজ কর্তৃপক্ষ।  

কলেজটিতে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি জন্য চার হাজার ৫শ’৩০ টাকা দিতে হবে বলে নোর্টিশবোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোন খাতে এই অর্থ ব্যয় হবে তা না দেখিয়ে সরাসারি লেখা হয়েছে তিন হাজার ৩শ’ ৩০ টাকা। টাকা জমা দিতে হচ্ছে কলেজের ব্যাংক হিসাবে। এছাড়া বিভাগীয় চার্জ হিসেবে সেমিনার ফি ৪০০ টাকা, ইনকোর্স ফি ৪০০ টাকা, টার্ম পেপার ৪০০ টাকা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির খাতে নেওয়া হচ্ছে আরো ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে বিভাগীয় চার্জ এক হাজার ২শ’ টাকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে নগদ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ৮শ’৩০ টাকার সঙ্গে বিভাগীয় এক হাজার ২শ’ টাকা যোগ করলেও ভর্তি ফি হওয়ার কথা দুই হাজার ৩০ টাকা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত আরো দুই হাজার ৫শ’ টাকা।  

যশোর এমএম কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজটিতে ১৭টি বিষয়ে মাস্টার্সের আসন রয়েছে পাঁচ হাজার ৩৭০টি। প্রতিটি আসনে দুই হাজার ৫শ’ টাকা হিসেবে বেশি আদায় করা হচ্ছে এক কোটি ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

খাত না দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায় করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।  

নাসরিন আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। অনেক কষ্ট করে আমার লেখাপড়ার খরচ চালান তিনি। মাস্টার্সে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে তিনি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। খাত বহির্ভুত টাকা নেওয়া হচ্ছে জানাতে পেরে মনে হচ্ছে লেখাপড়া ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাই। ’

তারেক আহমেদ নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকরা সম্মানের পাত্র। তাদের কাছ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। এটি আমরা কর্মজীবনে কাজে লাগাবো। এ ধরনের কাজ করলে আমরা তাদের কাছ থেকে কী শিখবো? প্রশ্ন করেন তারেক আহমেদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘ভর্তির জন্য কোন কোন খাতে টাকা নেওয়া হচ্ছে তা আমরা শিক্ষকরাই জানি না। আর এই টাকা কোথায় যায়, কী হয়? তার কোন হিসাবই আমরা জানি না। শুধু অধ্যক্ষ ও তার সংশ্লিষ্ট লোকজন বলতে পারবেন। ’

যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী বলেন, কলেজে অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা অতি দরিদ্র। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেন। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা কলেজ প্রশাসনের উচিৎ নয়। ভর্তির জন্য ফি বাবদ প্রতিটি টাকার খাতওয়ারি হিসাব থাকা উচিত। শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কোন ঘটনা ঘটলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

যশোর জজকোর্টের কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হবে। খাত উল্লেখ না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা অবৈধ। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।  

যশোর সরকারি এমএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু তালেব মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘চালের দাম বেড়েছে তাই আমরাও কিছুটা বাড়িয়েছি। তবে তেমন একটা বেশি বাড়ানো হয়নি। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৮
ইউজি/এএটি/জেএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।