বুধবার (০৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় একটি দিন অতিবাহিত করতে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সময়ের গ্রাজুয়েটরা। আনন্দ-উল্লাস আর ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
সমাবর্তনের সেই চিরচেনা পোশাক, কালো গাউন আর কালো হ্যাট পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের প্রিয় স্থানগুলো তাদের ক্যামেরার ফ্রেমেবন্দি করে রাখছেন। দলবদ্ধ হয়ে তুলছেন সেলফিও। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ মিলন মেলার উৎসবের ঢেউয়ে সামিল হয়েছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানো হয়েছে নান্দনিক সাজে। উৎসবে মেতে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত গ্রাজুয়েটরা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এক এক শিক্ষার্থীর আবেগ অনুভূতি এক এক রকমের।
১২ ব্যাচের প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কুয়েটে এসে মনে হচ্ছে কেমন যেন নিজেকে আবার ফিরে পেয়েছি। যেখানে চারটা বছর কেটেছে বন্ধুদের নিয়ে অনেক স্মৃতির মধ্যদিয়ে। আবার সেই প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরে এসে পুরানো দিনগুলো যেন খুঁজে পাচ্ছি। খান জাহান আলী হল, খাজার পুকুর, তড়িৎ কৌশল বিল্ডিং, দুর্বার বাংলা, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি আর রাত জেগে বন্ধুদের সঙ্গের আড্ডা দেওয়ার মুহূর্তগুলো আবার ফিরে পেয়েছি। ’
প্রকৌশলী রাইয়ান জাহিন বলেন, কুয়েটে এসে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। যদিও খান জাহান আলী হলের ২১১ নম্বরটা ঠিক আগের মতই আছে। নতুন শহীদ মিনার, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার, নতুন একাডেমিক ভবন, ফ্যাব ল্যাব ইত্যাদি কুয়েটে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। সবুজ এই ক্যাম্পাসে ঢুকেই কেমন যেন প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আর পুরানো স্মৃতির মুহূর্তগুলো আবার সব সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে।
আরেক তড়িৎকৌশল প্রকৌশলী মুবাশ্বির হোসেন জানান, আবার কুয়েটে এসে নিজের ভেতর একটা আবেগ কাজ করছে। স্মৃতি কাতর হয়ে পরছি। যদিও কিছুদিন সময় নিয়ে আসতে পারলে এসময়টাকে আরো বেশি স্মরণীয় করে রাখতে পারতাম, তবুও আমি আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত। তাছাড়া এখানে আসার পর থেকেই চার বছরের স্মৃতির কিছুটা হলেও পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারছি।
আবেগ আপ্লুত হয়ে প্রকৌশলী ফরহাদ হোসেন বলেন, সময়ের প্রয়োজনে হয়তো আজ আমরা বিভিন্ন শহরে। কিন্তু জীবনের চারটা বছর কাটিয়ে আসা কুয়েটের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার নয়। খানজাহান আলী হলে থাকতাম আমরা পাঁচবন্ধু। একই বিভাগে পড়তাম। আমাদের প্রতিদিনের শুরুটা একইভাবেই হতো। দিনের রুটিন ওয়ার্ক শেষে যখন রাত নামতো তখনি শুরু হতো আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তিতর্কের পর্ব। এটা বিশেষ করে পড়তে বসার সময় পরীক্ষার দিনগুলোতে এবং রাতের খাবার পর। মাঝে মাঝে একসঙ্গে ঘুরতে যেতাম, খেতে যেতাম। আমরা ৫ রুমমেট। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সলরের মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ‘স্বর্ণপদক’ নেবেন ৩৮ জন কৃতি গ্রাজুয়েট। এ সমাবর্তনে যেসব শিক্ষার্থী ২০১০-২০১১ থেকে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিইউআরপি এবং ২য় সমাবর্তনের পর থেকে এ সময়কাল পর্যন্ত পিএইচডি, এমফিল, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের ডিগ্রি দেওয়া হবে।
সর্বমোট ২৭৯৫ জনকে স্নাতক ও ২২৮ জনকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হবে। এর মধ্যে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ২৬৫৭, বিইউআরপি ১৩৮, এমএসসি ৬৯, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং১০৩, এমফিল ৪৮ এবং ০৮ জনকে পিএইচডি ডিগ্রির সনদ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
এমআরএম/এএটি