প্রকাশিত ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগকারী সংস্থা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পথে এগোচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৩ এপ্রিল) চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফলে স্কুল-২ পর্যায়ে ৬২৪ জন, স্কুল পর্যায়ে ১৫ হাজার ৩৬২ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ৩ হাজার ৮৭৭ জনসহ মোট ১৯ হাজার ৮৬৩ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ২৫ আগস্ট প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় স্কুল পর্যায়ে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৩৮ জন এবং কলেজ পর্যায়ে তিন লাখ তিন হাজার ৬১২ জনসহ মোট আট লাখ ছয় হাজার ৬৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন।
দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ফল প্রকাশের পর অসঙ্গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা অসঙ্গতির তথ্য শেয়ার করেছেন।
মোহাম্মদ তারেকুর রহমান (রোল নং-৩১১০৩৪১৯) রোল নম্বরে পরীক্ষা দিয়ে একই রোল নম্বরে পাসের ফল এসেছে একজন নারী প্রার্থীর। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হোয়াট ইজ দি প্রোবলেম?’
জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন লিখেছেন, ৩১১০৯৯৫৬ নম্বরে ফল এসেছে শামীমা ইয়াসমিনের নামের একজনের।
মো. শরীফ আহমেদ (রোল নং-৩১১১২৮৪৬) পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন জিসন বড়ুয়া নামের এক প্রার্থী।
মো. আবু আলম নামে একজন পোস্ট দিয়েছেন, রোল নং আমার স্ত্রীর, পাস করেছেন ইব্রাহিম। তার স্ত্রী ৩১১০০৩১১ রোল নিয়ে বিজনেস স্ট্যাডিজে পরীক্ষা দিলে একই রোলে ফল আসে ইব্রাহীম তালুকদার নামে এক প্রার্থীর।
পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতি নিয়ে ফল পুনর্প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।
শাহীন মাহমুদ নীরব লিখেছেন, যারা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের সবাইকে তাদের লিখিত পরীক্ষার নম্বর জানানো হোক। তা হলে বোঝা যাবে কার কি অবস্থা, কে কত নম্বর পেয়েছেন। পোস্ট নাই বলে পাস করাবে না এমন হবে না। অবশ্যই সার্টিফিকেট দিতে হবে, পাস করলে। কিসের ভিত্তিতে পাস করানো হয়েছে!! ভিত্তিহীন কোন নিয়ম গ্রহণযোগ্য হবে না। সম্মিলিত মেধাতালিকা গেল কই!! একজন নাগরিক হিসাবে তথ্য জানা ও প্রাপ্তির অধিকার আমাদের আছে। আন্দোলন ছাড়া উপায় নাই। নিয়ম নীতি ছাড়া এভাবে মজা করার অধিকার এনটিআরসি’র নাই।
৪০ নম্বর পেলে বিজ্ঞপ্তিতে পাস করার কথা বলা হলেও অনেকেই ভালো পরীক্ষা দিয়ে রোল না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। মো. মাজহারুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, জীবনে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পরীক্ষায়-ই ফেল করিনি। বাট ১৪তম নিবন্ধনে স্কুল, কলেজ দুই পর্যায় ফেল দেখাচ্ছে। কিন্তু ১৩তমতে আমার উপজেলায় আমিই প্রথম হয়েছি, সেই আমিই আবার ১৪তমতে ফেল। শুনলাম যাদের উপজেলায় পোস্ট ফাঁকা নেই তাদের পাস করায়নি। তা হলে আমার প্রশ্ন হলো আমার উপজেলায় যদি পোস্ট না থাকে তাহলে কেনো আমাকে পরীক্ষার জন্য ডাকা হলো এবং আমার মতো লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭৫০ টাকা+যাতায়াত খরচ আরো ১০০০ টাকা নেওয়া হলো। এর জবাব কি এই মেরুদণ্ডহীন প্রতিষ্ঠান দিতে পারবে? জানি পারবেনা। তাই জবাব চাইও না। তবে আমি অবাক যেখানে স্কুল, কলেজ দুইটাতেই ৭০+ মার্কস থাকার কথা।
তবে আপেল মাহমুদ নামের একজন ফলাফলে অসঙ্গতির কারণ তুলে ধরে বলেছেন, ফলাফল প্রস্তুত ছিলো অনেক দিন আগে। ফলাফল যখন প্রস্তুত ছিলো তখন ১৬৬টি রিটের রায়ের কপি তাদের হাতে পৌঁছাইনি। সে জন্যই ১৩তমের মতো উপজেলায় শূন্য পদ অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হয়। এনটিআরসিএ'র চেয়ারম্যান অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার সঙ্গী হিসাবে স্থান পাননি অনেকে। তাই চেয়ারম্যানকে অপদস্থ/হেয় করতে ফলাফলে নানা ধরনের অসঙ্গতি। তাদের নিজেদের মধ্য রেষারেষির বলি হচ্ছেন সাধারণ নিবন্ধনধারীরা।
যোগাযোগ করা হলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এ. এম. এম আজহার বাংলানিউজকে বলেন, এমন (অসঙ্গতি) কোন বিষয় আমার কাছে রিপোর্ট করেনি, আপনার কাছে রিপোর্ট করেছে। লাখ লাখ প্রার্থী একটা-দুইটা হতে পারে। তাদেরকে আমার কাছে আসতে বলেন, আমরা অ্যাড্রেস করবো।
এর বেশি বিস্তারিত বলেননি চেয়ারম্যান।
আইনি জটিলতার কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতার মধ্যে নতুন এই ফলের অসঙ্গতি নিয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিত নিয়োগবঞ্চিত জাতীয় ঐক্য পরিষদ আইন লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস