ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দোষীদের শাস্তি, নিরাপরাধদের মুক্তি চান ভিসিরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৮
দোষীদের শাস্তি, নিরাপরাধদের মুক্তি চান ভিসিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের আন্দোলন থেমে যাওয়ার পর হঠাৎ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রাস্তায় নেমে ভাঙচুরের পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা (ভিসি)।

একই সঙ্গে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে নিরাপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও নজর দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আয়োজনে বুধবার (৮ আগস্ট) ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এ আহ্বান জানান।


 
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। দুই সেমিস্টারের পরিবর্তে আমাদের ট্রাই সেমিস্টার কাজে দিয়েছে, আন্দোলনে থাকেনি।
 
‘আমার একটা আবেদন, শিক্ষার্থীদের একেবারে মাফ করে দেন। যে যেখানে যা করেছে। আমি শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই। ’
 
লন্ডন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি আনোয়ারুল করিম বলেন, ছাত্র আন্দোলন সহমর্মিতার সঙ্গে দেখার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তৃতীয়পক্ষ যদি ঢুকে যায়, রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা হয়, তাহলে খুব খারাপ হবে।
 
২৯ আগস্ট বাসচাপায় দুই ছাত্র নিহত হওয়ার পর ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর মধ্যদিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী অফিসে হামলার ঘটনাও ঘটে।
 
ছাত্ররা ওই গুজবে কান দিয়েছিল জানিয়ে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মান্নান বলেন, গুজব ছড়ানোর পর বললো, এরপরও আমাদের যেতে দেবেন না? আমাদের ভাইয়েরা মার খাচ্ছে। আমি সাথে সাথে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি, তিনি আওয়ামী লীগ অফিসের কাছে ছিলেন। আমি জিজ্ঞাস করলাম কিছু হয়েছে কিনা- বললো না। আমি তখন বললাম কিছু হয়নি। তখন ছাত্ররা থেমে গেলো। আমরা ক্লাস বন্ধ করিনি, ক্লাস চলায় কিছু ছাত্র এসেছে।
 
প্ররোচণায় যারা রাস্তায় নেমেছিল তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সরাসরি জড়িত তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
 
আন্দোলন থেমে যাওয়ার পর হঠাৎ করে ৬ আগস্ট ঢাকার বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে ভাঙচুর চালায়।
 
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আতিকুল ইসলাম বলেন, নর্থ-সাউথ আক্রান্ত হয়নি, বহিরাগত ৭-৮শ ভিতরে ঢুকেছিল। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে বের করে দিয়েছি। ১০-১২ জনের মধ্যে মাত্র একজন বলেছে তারা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছে।
 
তিনি আরও বলেন, পরিবহন বন্ধ থাকায় উপস্থিতি আমাদের কমে গিয়েছিল, আমরা ক্লাস কোনো কারণে বন্ধ করিনি। পরিবহন ঠিক হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
 
প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ভিসি আব্দুল হান্নান চৌধুরী ঘটনার সার্বিক বিশ্লেষণ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন পুলিশ না ঢোকে সেদিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান। নিরাপরাধদের ছেড়ে দেওয়ারও অনুরোধ করেন তিনি।
 
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বেনজির আহমেদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যে কোনো ধরনের সহায়তা পাবেন।
 
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ঘটনার পর প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা চিঠি দিয়েছি, কথা বলেছি।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভ্যাট আন্দোলনের সময় কলাপস হয়েছিল। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে আছে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা টাকা দিয়ে পড়ে, তাই সহজেই ঠাণ্ডা হয়।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি সুন্দরভাবে এই ঘটনার সমাধান করেছেন। তিনি মাতৃতুল্যভাবে তাদের শান্ত করেছেন।
 
আশা ইউনিভার্সিটির ভিসি ডালিম চন্দ্র বর্মণ, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হোসেন রেজা, ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ভিসি আমিরুল হক, উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রোভিসি ইয়াসমিন আরা লেখা, টাইমস ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শরীফ এনামুল, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার আল আমিন মোল্লা বক্তব্য রাখেন।
 
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আমরা চাই একদিনের জন্য যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ না হয়। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ইউজিজির পক্ষ থেকে সব রকমের সহায়তা দেওয়া হবে।  

গুজবে কান না দিয়ে হুজুগে না নামার আহ্বান জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।  
 
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, আমাদের লক্ষ্য অর্জনে কেউ উদ্দেশ্যেমূলকভাবে বাধা দিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনোভাবেই শিক্ষা কা্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা চাই না।
 
সরকার শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, একটি মহল ছাত্রদের বিপথগামী করার চেষ্টা করেছে, গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করেছেন। এ পরিস্থিতিতে ছাত্রদের জীবনহানির আশঙ্কা দেখা যায়।
 
‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন ছিল, অনেকই সচেতন ছিলেন না। যার ফলে এসব ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। মূল দায়িত্ব ভিসির। জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে, এজন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে সচেতন করতে হবে। শিক্ষার্থীকে সঠিকপথে পরিচালনার দায়িত্ব ভিসিদের। না পারলে জবাবদিহি করতে হবে। মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি আপনাদের পাশে আছি। ’  
 
ভিসিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে যারা অপরাধ করেছে তাদের বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। আমরা চাইবো নিরপরাধ শিক্ষক-শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হন। প্রধানমন্ত্রীও সাধারণ ছাত্রদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৮
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।