প্রতিবছর চক্রের অনেক সদস্য আটক হলেও কোনোভাবেই থামছে না জালিয়াতি। এরইমধ্যে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার রাবিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দরদামের অডিও ফাঁসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দুই পদ্ধতিতে জালিয়াতি হতে পারে। প্রথমত, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে পরীক্ষার্থী ও প্রক্সিদাতার ছবিতে কারসাজির মাধ্যমে ভর্তিচ্ছুর শিক্ষার্থীর হয়ে অন্যজনের পরীক্ষা দিয়ে এ জালিয়াতি হতে পারে এবং দ্বিতীয়ত, ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলে প্রশ্ন সংগ্রহ করে সমাধানের পর তা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কাছে পাঠিয়ে হতে পারে।
যদিও অতীতে কখনো ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নজির মেলেনি। তবে বরাবরের মতোই এবারও ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বা ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ছক কষছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।
গোয়েন্দা সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করতে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করছে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। এ চক্রের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও আছেন। বিগত বছরগুলোর ভর্তি পরীক্ষায় সংঘটিত জালিয়াতিতে ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে।
সম্প্রতি টাকার বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এক ভর্তিচ্ছুর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক তারেক আহমেদ খান শান্তর ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ফোনালাপে ছাত্রলীগ নেতাকে দরদাম করতে শোনা যায়।
যদিও যোগাযোগ করলে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা শান্ত বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, ওই শিক্ষার্থী তাকে বারবার ফোন করে বিরক্ত করছিল। ভেবেছিলেন তাকে এভাবে বলে ডেকে এনে পুলিশে দেবে। কিন্তু তার আগে তিনি নিজেই ফেঁসে গেছেন।
গত সোমবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন ও আইন বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান আলীকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সর্বশেষ (১৮ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার ভর্তি জালিয়াতির চেষ্টার অভিযোগে স্থানীয় গোলাম রব্বানী নামের এক যুবককে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন নিলে ৫০ হাজার টাকা আর দেড় লাখ টাকায় সরাসরি ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে অগ্রিম টাকা নিতে এসে ধরা পড়ে ওই যুবক। রিফাত আরা মুন নামের এক ভর্তিচ্ছুকে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গোলাম রব্বানী। সেদিন দুপুরে প্রতিশ্রুতির অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নিতে এলে মুনের বন্ধুরা পিটুনি দিয়ে রব্বানীকে পুলিশে দেন।
এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মেহেদি হাসান সজল ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা বিন ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করেছি। এবারও ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। যেকোনো ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
এসএস/এপি/এইচএ/