সবাই ডাকসু নির্বাচনের আগ্রহ দেখালেও মূলত ক্ষমতাসীনদের উদাসীনতায় বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও ভেস্তে গেছে সব আয়োজন। এবার আদালতের রায়ের বাধ্যবাধকতায় বহুল প্রত্যাশিত ডাকসু ও হল সংসদের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
সোমবার (১১ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ হলে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। একটানা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপরেই ফলাফল প্রকাশ করা হবে। মোট ভোটার রয়েছে ৪৩ হাজার ২৫৬ জন।
বিদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন...
কেন্দ্রীয় সংসদে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র থেকে ডাকসুতে ২২৯ জন প্রার্থী। তার মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া এজিএস পদে ১৩ জন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন এবং ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে ৮৬ জন নির্বাচন করছেন।
সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ মনোনীত প্রার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছাত্রদলের মোস্তাফিজুর রহমান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নূরুল হক নূর, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের লিটন নন্দী ও স্বতন্ত্র জোটের অরণি সেমন্তি খানের মধ্যে মূল লড়াই হবে।
অন্য প্রার্থীরা হলেন- ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের এসএম আতায়ে রাব্বী, ছাত্রলীগ-বিসিএল নাইম হাসান, ছাত্রমৈত্রীর রাসেল শেখ, ছাত্রমুক্তিজোটের শিহাব শাহরিয়ার সোহাগ।
স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ভিপি প্রার্থীরা হলেন- আব্দুল আলীম, গোলাম রাসেল, এডিএম আব্বাস আল কোরেশী, সফিক সরকার, আবদুল্লাহ আল লাবিব, আবদুল্লাহ জিয়াদ, ওমর ফারুক, টিটো মোল্লা, ফাহমিদা মজিদ, শফিকুল ইসলাম, ওমর ফারুক, নকীবুল হাসান ও রাকিবুল ইসলাম।
জিএস পদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে গোলাম রাব্বানী, স্বতন্ত্র থেকে এআরএম আসিফুর রহমান, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ফয়সাল মাহমুদ সুমন, ছাত্র সমাজের মামুন ফকির, ছাত্রদলের আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাশেদ খাঁন, ছাত্র মুক্তিজোটের রাশেদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ জাসদ থেকে শফিকা রহমান শৈলী, স্বতন্ত্র জোটের শাফী আবদুল্লাহ, ছাত্রলীগ বিসিএল শাহরিয়ার রহমান, ছাত্রমৈত্রীর সনম সিদ্দিকী ও স্বতন্ত্র থেকে জালাল আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সর্বমোট ৫০৯ জন প্রার্থী। প্রতিটি হলে ১৩টি করে পদ রয়েছে। অনেকে আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় ২০১২ সালে ২৫ শিক্ষার্থীর করা রিটের উপর ভিত্তি করে। সে সময় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ থেকে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপরে আবার থমকে যায় ডাকসু নির্বাচনের আওয়াজ। পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। নির্বাচন চেয়ে সমাজকল্যাণ বিভাগের ওয়ালীদ আশরাফ অনশন করেন।
২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালত ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল আদালত সেটি গ্রহণ না করলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা ২০১৯ মার্চের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল প্রকাশ করে।
১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সৃষ্টি হয়। মোট ৩৬ বার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডাকসুর প্রথম ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। এরপর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৯
এসকেবি/জিপি