শনিবার (১৬ মার্চ) ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সরকারি সাঁড়া মাড়োয়ারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ’র পথচলার ১০০ বছর স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ছাত্ররা এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানান।
এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেলে দুইদিন ব্যাপী বর্ণাঢ্য সম্মিলন উৎসবের উদ্বোধন করেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ভাষাসৈনিক শামসুর রহমান শরীফ।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক শহিদুল হাসান ববী সরদারের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, প্রাক্তন ছাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ বাচ্চু।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন- প্রাক্তন ছাত্র ও ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মূল নায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, প্রাক্তন ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী বিশ্বাস, আজমল হক বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম পানু, ফজলুর রহমান ফান্টু, তহুরুল আলম মোল্লা, মোফাদুল হোসেন, শাহ জালাল, ডাবলু বিশ্বাস, মোশাররফ হোসেন, নাজমুস সাদাত, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাবিবুর রহমান, নুরুল মোয়াজ্জেম সবুজ, হাফিজুর রহমান মোল্লা, হাফিজুর রহমান হাফিজ, জাকির হোসেন জুয়েল, ইমরুল কায়েস সুমন প্রমুখ।
প্রাক্তন ছাত্র ও সাংবাদিক আলাউদ্দিন আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি একটা সময় পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতিতে মেধাবীদের আনা হতো। পরবর্তীতে এ ধরনের অনেক মেধাবি নেতাই হতাশায় আক্রান্ত হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন। আগে স্কুল-কলেজ থেকে সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে সৃজনশীলতার যে অনুশীলন হতো, তা মেধা বিকাশে সহায়ক হতো। এখন অবশ্য ছাত্র রাজনীতিতে সেই ধারাটি আর নেই। শিক্ষা জীবনের পর বাস্তব জীবনে এসে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও স্কুল জীবনের স্মৃতি কেউ ভুলতে পারে বলে মনে হয় না। ’
প্রাক্তন ছাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রহিম স্যারের মতো শিক্ষকরা ছিলেন অভিভাবকের মতো। শাসন-স্নেহ দুটোই তারা করতেন। রহিম স্যারের জোড়া বেতের শাসনই আজ আমাদেরকে চলতে সাহায্য করছে। ’
প্রাক্তন ছাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘তরুণ শিক্ষার্থী আজকে যারা আছো, তোমরা বড় হতে চাইলে ঠিকমত পড়াশোনা করবে, বাবা-মাকে এবং শিক্ষককে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে। তবেই তোমরা ভালোভাবে বড় হয়ে উঠবে। ’
প্রাক্তন ছাত্র জাকির হোসেন জুয়েল বলেন, ‘শিক্ষকদের কঠোর শাসন আমাদের গড়ে তুলেছে। কিছু স্মৃতি আনন্দদায়ক, কিছু স্মৃতি কষ্টদায়ক, যা মাঝে মাঝে ভেসে উঠে। অনেক কিছু মুছে গেলেও স্কুল জীবনের স্মৃতি এখনো অম্লান। ’
প্রাক্তন ছাত্র সহকারী অধ্যাপক মীর হুমায়ুন কবীর বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলে আমরা খুবই আনন্দ পেতাম। ছোট গল্প, ছড়া, কবিতা লিখে সেগুলো আবার একটি বড় আর্ট পেপারে সুন্দরভাবে সাজানো হতো। যার হাতের লেখা ভালো তাকে দিয়ে দেয়াল পত্রিকা লিখে অফিসের দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া হতো। এখন আর এগুলো হয় না। তার অন্যতম কারণ অসুস্থধারার ছাত্র রাজনীতির অনুপ্রবেশ। এক ধরনের অস্থিরতা শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’
১৯১৭ সালে পদ্মা নদীর তীরে সাঁড়ায় ইউনিয়নে প্রথম বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেসময় সাঁড়া এ অঞ্চলের ব্যস্ততম নদী বন্দর ছিল। নদী ভাঙনের বিষয়টি মাথায় রেখে এক বছর পরই ঈশ্বরদী শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৮ দশমিক ১৯ একর জমির ওপর বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের হরি প্রসাদ ঝুনঝুনওয়ালা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রথম প্রতিষ্ঠা সাঁড়া এবং প্রতিষ্ঠাতা মাড়োয়ারি হওয়ার কারণে সাঁড়া মাড়োয়ারি উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন সেই সময়ের গ্রাজুয়েট বিদ্যাধর দাশগুপ্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
জিপি