ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু! মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ মনোনয়নপত্র বৈধ হলে এবং তা প্রত্যাহার না করলে তিনিই হচ্ছে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, চিফ হুইপ লিটন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অন্যরা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহীবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্র্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংসদীয় দল তার ওপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি যে দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন। তার আলোকে তিনি এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।

মো. সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী। আওয়ামী লীগের বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এর আগে জেলা সিনিয়র দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি দীর্ঘ তিন বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস বিচার বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের সংগঠিত হত্যা, লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড অনুসন্ধানে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৩ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালে সংগঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সহপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারাবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা। তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।

আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘নির্বাচনি কর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ ভবনে, দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী তাঁর দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।

এদিকে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের এসব বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে ২৪ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

২০১৮ সালে সর্বশেষ এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ওই বছর ২৫ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ভোটগ্রহণের সময় রাখা হয়েছি ১৮ ফেব্রুয়ারি। সে সময় ২২ দিনের মধ্যে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সে সময় বর্তমান রাষ্ট্রপতি একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থক হতে হয়। আর সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনের ভোটার। বর্তমান সংসদে সংখ্যাগরিষ্ট দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এজন্য এই দল থেকে যে প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে, তিনিই নির্বাচিত হচ্ছেন বলে ধরে নেওয়া যায়।

সাহাবুদ্দীন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রস্তাবক হয়েছেন ওবায়দুল কাদের আর সমর্থক হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

আইনি বাধ্যবাধকতা অনুসারে একক প্রার্থী থাকলে এবং তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় (১৪ ফেব্রুয়ারি) শেষে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হবেন।

‘প্রাক্তন’ রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর মো. আবদুল হামিদ ২০১৮  সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছর ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আর এই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
ইডি/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।